ফরাসী খাওয়া দাওয়া – টুনা মাছ (Tuna)

 

Tuna (2)

রুই, কাতলা, ইলিশ, পুঁটি, মৌরলা, কই মাছ চেনা মানুষ আমরা – টুনা মাছ দেখতে কেমন কিংবা খেতে কেমন হয় তা জানবো কি করে? গল্পেই শুধু টুনা মাছের কথা শুনে এসেছি।

ফ্রান্সে গিয়েই প্রথম টুনা মাছের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল – তাও ফ্রেশ টুনা নয় – টিন টুনার সঙ্গে সুপার মার্কেটের শেল্ফে পরিচয় হয়েছিল। সাধারণত, ইউরোপের প্রায় সব দেশ গুলোতে টিনে ভর্তি টুনা মাছ নাকি প্রায় প্রতিদিনের খাদ্যের প্রটিনের চাহিদা মেটায়। ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালির প্রায় প্রধান খাদ্যের মধ্যে টুনা মাছ প্রথম দিকে আসে।

ঐ টিন টুনা মাছ নানা ভাবে অতি সহজে ওদের খাদ্যে যোগ হয় – কখনো স্যালাদের আকারে আবার কখনো স্যান্ডউইচের আকারে।

তাই, সেই টিন টুনা মাছের সঙ্গেই আমাদের পরিচয় হয়েছিল। তাজা টুনা মাছ নাকি পাওয়া খুব মুশকিল, সমুদ্রের তীরের শহরে বছরের বিশেষ সময় ছাড়া নাকি পাওয়াই যায় না – সব তাজা টুনা মাছ যা ধরা পড়ে সবই প্রায় টিন জাত হয়ে যায়।

কিন্তু, ফ্রান্সেই যে তাজা টুনা মাছ পাওয়া যায় – তা তুলুসের নিকটবর্তী সমুদ্র তীরে না গেলে বোধহয় জানতেই পারতাম না।  দক্ষিণ ফ্রান্সের সমুদ্র তীরের সারি সারি রেস্টুরেন্ট গুলোয় সামুদ্রিক খাবার পাওয়া যায় – সমুদ্র থেকে ধরে আনা নানা ধরণের মাছে ওদের প্রতিদিনের মেনু ‘plat du jour’ তৈরি হয়। আর, সেই ‘plat du jour’ মেনুর মধ্যে প্রধান হল তাজা টুনা মাছের স্টেক। সেই তখনই আমাদের তাজা টুনার সঙ্গে প্রথম পরিচয়।

Tuna (1)

টুনা মাছ নিয়ে এক কৌতূহল তো ছিলই – টুনা স্টেক অর্ডার করলাম। প্লেটে এলো টুনা স্টেক – সুন্দর ভাবে রোষ্ট করা, উপরে একটু অলিভ ওয়েল, রসুন কুচি ও পার্সলে পাতা কুচি ও রোদে শুকোনো টোম্যাটো কুচি ছড়ানো। আর প্লেটের এক পাশে বাটার ও রসুন কুচি দিয়ে ভাজা এক বাটি ভাত। দক্ষিণ ফ্রান্সের সমুদ্র তীরে নাকি, মাছের সঙ্গে সাধারণত ভাত পরিবেশন করা হয়। পর্তুগালেও দেখেছি মাছ ভাজার সঙ্গে ওরা সাধারণত স্টিমড রাইস পরিবেশন করে।

মেডিটেরিয়ান ও অ্যাটল্যান্টিকে টুনা মাছ ধরার ব্যবসা প্রায় দুই হাজার বছর পুরনো। গত কয়েকশো বছর ধরে স্পেন, ইটালি ও ফ্রান্সের মেডিটেরিয়ান ও অ্যাটল্যান্টিক সমুদ্র তীরের মানুষ টুনা মাছ ধরে এসেছে।

যদিও নানা ধরণের টুনা মাছ পাওয়া যায় – কিন্তু বাজারে অ্যাটল্যান্টিক bluefin টুনার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। কারণ bluefin টুনার স্বাদ অতুলনীয়। আর এই অ্যাটল্যান্টিক bluefin টুনা মাছ এক একটির ওজন অন্তত পক্ষে একশো বা দেড়শ কেজির উপরে তো হয়ই। আর সেই অতিকায় দৈত্য আকারের মাছ ধরার জন্যে নানান ধরণের সরঞ্জামেরও প্রয়োজন হয়।

যদিও ইউরোপের কাছে টুনা মাছ বহুদিনের চেনা। কিন্তু, পৃথিবীর বহু দেশের কাছে টুনা মাছ আজও অচেনা।

সাধারণত জাপানিরা সামুদ্রিক খাবার খেতে পছন্দ করে – সেই জাপানিরা যখন প্রথম টুনা মাছের স্বাদ পেল, সেই স্বাদ ওদের খুবই পছন্দ হয়ে গেল। বর্তমানে, অ্যাটল্যান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগর থেকে ধরা টুনা মাছের প্রায় আশি শতাংশ মাছ নাকি জাপানিরা খায়। এবং জাপানে এই টুনা মাছ খুবই বেশী দামে বিক্রি হয়।

আর জাপানিদের জন্যে, ও আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রির জন্যে ইউরোপের টুনা মাছ ব্যবসায়ীরা এতোই বেশী পরিমাণে টুনা মাছ ধরতে শুরু করেছিল, যে আজ নাকি অ্যাটল্যান্টিক সমুদ্রের অতিকায় bluefin টুনা প্রায় বিপন্নের মুখে।

অ্যাটল্যান্টিক সমুদ্র থেকে গত চল্লিশ বছরে bluefin টুনা মাছের সংখ্যা নাকি খুবই দ্রুত শেষ হতে শুরু করে দিয়েছে। তাই ফ্রান্সের অনেকেই আন্তর্জাতিক বাজারের জন্যে টুনা মাছ ধরার বিপক্ষে। ওরা বলে – যদি এই ভাবে অ্যাটল্যান্টিক সমুদ্র থেকে টুনা মাছ ধরে শেষ করে দেওয়া হয়, পরবর্তী প্রজন্ম এই মাছ কেমন দেখতে হয় তাও হয়তো জানবে না, খাওয়া তো দূরের কথা।

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in France, Travel, Western-Europe and tagged , , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান