তাজ ভ্রমণের রূপকথা -৩ (The Taj Mahal, Agra, India)

যৌবন, জীবন, সময় সবই ধীরে ধীরে চলে যায় – শুধু থেকে যায় মানুষের সৃষ্টি, আর ভালোবাসার কথা।

শাহ্‌জাহানের মতো সম্রাটও প্রকৃতির নিয়মের বাইরে নন। তাছাড়া আছে, সিংহাসনের দাবীদারের রাজনীতি। মুমতাজ মহল তৈরির জন্যে প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়েছিল এবং শাহ্‌জাহানের বিলাস বহুল জীবন যাপনের জন্যে মুঘল রাজকোষে সেই সময় প্রচুর অর্থ সংকট দেখা গিয়েছিল।

আর সেই রাজ্যের ভার নেওয়ার জন্যে শাহ্‌জাহানের শেষ বয়সে ঔরংজেব তাঁকে আগ্রা দুর্গের এক ঘরে কয়েদ করে রেখেছিল। যে ঘরে শাহ্‌জাহানকে বন্দী করা হয়েছিল সেই ঘর থেকে তাহজমহলকে দেখা যেত। আর জীবনের সেই শেষ সময়ে শাহ্‌জাহানের কাছে সেটাই ছিল একমাত্র সান্ত্বনা।

আর আজ, মনে হয়, তাজমহল মানে গোটা পৃথিবীর মানুষের অস্তিত্বের এক স্বপ্নিল রূপ। যেখানে, ভালোবাসা, মানবতা, স্বপ্নরা রূপ পায়।

মানুষ পৃথিবীতে আসে, চলে যায় – আর সেই আসা যাওয়ার মাঝেই যে এতো মহান এক শিল্পের নমুনা পৃথিবীর বুকে রেখে যেতে পারে –  সেই আশ্বাসের নাম তাজ।

তাজ শুধু এক স্থাপত্যের নাম নয় – স্থাপত্যের চেয়েও অনেক বেশী। গোটা দেশের মানুষের অস্তিত্ব, সৌন্দর্য, শক্তি, ভালোবাসার প্রতীক এই তাজ।

শুধু কি তাজের সৌন্দর্যেই মানুষ বিমোহিত?

ভারতবর্ষের মানুষের স্থাপত্যগত দক্ষতার আশ্চর্য এক নমুনা এই তাজ – যা কিনা আজও পৃথিবীর নানা দিকের আর্কিটেক্ট ও ইঞ্জিনিয়ারদের ভাবায়। তাজের প্রধান গম্বুজ থেকে শুরু করে চারটে মিনার – সব কিছুতেই মুঘল আমলের ইঞ্জিনিয়রিং দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায়।

যেমন, তাজের প্রধান পেঁয়াজ আকৃতির গম্বুজকে ঘিরে যে চারটে মিনার দেখা যায় তা একটু বাইরের দিকে হেলানো – কারণ যদি কখনো ভূমিকম্প হয় – ঐ চারটে মিনার বাইরের দিকেই ভেঙ্গে পড়বে, ভেতরের প্রধান গম্বুজ অক্ষত থাকবে – স্থায়িত্বের জন্যে কত বড় দূরদর্শিতা!

তারপর, বর্তমানে তো গম্বুজ তৈরির জন্যে কত ধরণের পদ্ধতি আছে – ধাতুর পাত আছে। কিন্তু, সেই সময়ে গম্বুজ তৈরির জন্যে ওদের কাছে পাথরই ছিল ভরসা। পাথরের পর পাথর বসিয়ে দিয়ে গম্বুজ তৈরি করতে হয়েছিল। কোন পিলার ছাড়াই পাথরের পর পাথর বসিয়ে দিয়ে ঐ গম্বুজ তৈরি হয়েছিল। যেন অতিকায় সেই গম্বুজ আকাশে ভাসছে।

আর সেই অতিকায় গম্বুজের ভার গিয়ে নিচে পড়ে – আর সেটাই দেয় স্থায়িত্ব – আশ্চর্য সেই স্ট্রেস কেলকুলেশনের রহস্য যা কিনা আজও ইঞ্জিনিয়ারদের ভাবায়। তাজ মানে স্থাপত্য, বিজ্ঞান ও সৌন্দর্যের এক নিখুঁত সমাহার।

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Asia, India, Travel, Uttar Pradesh and tagged , , , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান