স্প্লিটের পাতাল-বাজার (Underground Market of Diocletian’s Palace, Split, Croatia)

ইউরোপের প্রত্যেক বাজারেরই এক নিজস্ব গন্ধ থাকে, থাকে সুর – যা দিয়ে সেই বাজারের আসল চরিত্রকে বোঝা যায়। আবার ইউরোপের কোন কোন বাজারের গন্ধ দিয়ে বোঝা যায় বছরের কোন সময় চলছে।

যেমন, মন মাতানো চেস্ট নাট পোড়ানোর গন্ধ মানে – ক্রিসমাস দোরগোড়ায়, শীতের ছুটির মরশুম চলছে। কিংবা, হয়তো, কোন বাজারকে যখন মন মাতানো ফুলের গন্ধ ভরিয়ে রাখে – বোঝা যায় সামার চলে এসেছে। ইউরোপের এই হাট-বাজার গুলো যেন সময়কে ধরে রাখতে জানে।

স্প্লিটের শতাব্দী প্রাচীন Diocletian  প্রাসাদের পাতাল গর্ভে এক বাজার বসে – সেই বাজারে যেন আজও অতীতের গন্ধ থমকে থাকে। পাতাল গর্ভে যাওয়ার সিঁড়ি ধরে নিচে নেমেই এক শ্যাওলা গন্ধ, পুরনো গন্ধ, সময়ের এক গন্ধের সঙ্গে পরিচিত হতে হয় – আর সময়ের সেই গন্ধই মনে হয় স্প্লিটের এই পাতাল বাজারের আসল চরিত্র।

হয়তো, এই বাজারে এসে, একটু সময় নিয়ে খুঁজে দেখলে কোন এক ক্রোয়েশিয়ান শিল্পীর মাস্টার পিসের খোঁজ পাওয়া যেতে পারে। কিংবা, স্প্লিটের কোন এক ছোট্ট সুভেনিরও পাওয়া যেতে পারে। তাই, টুরিস্টরা স্প্লিটে এলে অন্তত এক বার এই পাতাল গর্ভের বাজারে আসে।

আসলে রোমান সময়ের প্রাসাদের নিচে বর্তমান জন জীবনের বাজার, লেনদেন – এটাই আসলে এই পাতাল বাজারের মূল বিশেষত্ব – যা দেখতেই মানুষ এখানে আসে। যতটা না জিনিস কেনার ছল, তার চেয়েও বেশী টান – এক ঐতিহাসিক স্থাপত্যের নিচে আজও কি করে জীবনের লেনদেন চলে, তা দেখা।

ইউরোপের ঐতিহাসিক শহর গুলোর গায়ে, প্রাচীন স্থাপত্যের মাঝে যখন হাট বসে। সেই হাটে গিয়ে বর্তমান বহমান জীবনের লেনদেন দেখতে, সময় কাটাতে বোধহয় অনেকেই ভালোবাসে। তাই, ইউরোপের যে কোন ঐতিহাসিক শহরের গায়ে যখন হাট বসে, স্থানীয় মানুষের সঙ্গে সঙ্গে চলমান স্থানীয় জীবন যাপনের এক ঝলকের খোঁজে প্রচুর টুরিস্টও দেখা যায়। স্প্লিটের এই বাজারেও তার অন্যথা হয় না।

সাধারণত, ইউরোপের অন্য জায়গায় রোমান স্থাপত্যের নিদর্শন গুলো প্রায় সবই পরিত্যক্ত, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে – বর্তমান জন জীবনে যে স্থাপত্য একদমই ব্যবহার হয় না, হতে পারে না। কিন্তু, স্প্লিটের এই রোমান স্থাপত্য আজও বর্তমান জন জীবনে ব্যবহার হয়, যে স্থাপত্যকে কেন্দ্র করে মানুষ আজও বসবাস করে – সেটাই স্প্লিটের এক আশ্চর্য বিশেষত্ব। রোমান ইঞ্জিনিয়ারিং দক্ষতার নিদর্শন – যা সময়কে জয় করে আজও দাঁড়িয়ে আছে।

রোমান রাজা,  Diocletian এর সময়ে এই পাতাল গৃহ ভাড়ার ঘর ও বন্দীদের কারাগার হিসাবে ব্যবহার হত। তারপর, দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ ও এই কিছুদিন আগে পর্যন্ত, মানে ক্রোয়েশিয়ার যুদ্ধের সময়ে, এই প্রাসাদের পাতাল গর্ভ স্থানীয় মানুষদের আবর্জনা ফেলার জায়গা হিসাবে ব্যবহার হত।

তারপর, ক্রোয়েশিয়ার যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে, ক্রোয়েশিয়াকে ঢেলে সাজানো হয়েছিল। Diocletian প্রাসাদকে সংস্কার করে, এই পাতাল গর্ভের সমস্ত আবর্জনার স্তূপ সরিয়ে দিয়ে, এই পাতাল গর্ভকে এক সুন্দর বাজারে পরিণত করা হয়েছিল।

ওদের আশা ছিল – সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত এই জায়গায় মানুষের আসা যাওয়া চলবে, বেচাকেনা চলবে, লেনদেন চলবে – প্রাচীন প্রাসাদের নির্জন, নিঃসঙ্গ পাতাল গর্ভ মানুষের আনাগোনায় জীবন মুখরিত হয়ে উঠবে। আর আজ, সত্যিই প্রাচীন প্রাসাদের সেই পাতাল গর্ভ প্রচুর মানুষের আনাগোনায়, জীবন যাপনের গুঞ্জনে ভরপুর জীবনমুখী।

 

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Croatia, Europe, Southern-Europe, Travel and tagged , , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান