ভ্যাটিকানের সুইস গার্ড (The Pontifical Swiss Guard)

The Pontifical Swiss Guard) (2)

ভ্যাটিকানের ক্যাথিড্রালে ঢোকার মুখে, লাল, নীল ও হলুদ রঙের রংচঙে পোশাক পরিহিত, সুইস বল্লম ‘halberdহাতে যে গার্ডদের দেখা যায় – পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে ছোট্ট ও প্রাচীন আর্মির মধ্যে অন্যতম এই পাহারাদাররা আসলে – সুইস। সুইস গার্ড।

আল্পসের কোলে ছবির মতো সাজানো, সুইজারল্যান্ড দেশটি আজ যতই ঐশ্বর্যশালী হোক না কেন – প্রায় পাঁচশো বছর আগে খুবই গরীব দেশ ছিল। তখন, ইউরোপের মধ্যে অন্যতম গরীব দেশের মধ্যে সুইজারল্যান্ড ছিল – সেই সময় সুইজারল্যান্ডের যুবকরা জীবিকার জন্যে ইউরোপের নানা জায়গায় ছড়িয়ে গিয়েছিল।

বহু আগে থেকে, সুইস যোদ্ধাদের পারদর্শিতা, বিশ্বস্ততা, নিয়মানুবর্তিতার সুনাম ছিল। তাছাড়া, চোদ্দ শতাব্দীতে সুইস যোদ্ধারা ইউরোপে, নানা যুদ্ধে বার বার নিজেদের পারদর্শিতার প্রমান দিয়েছিল, বিশেষ করে রোমানদের হয়ে, কিংবা ফ্রান্সের হয়ে নানা জায়গার যুদ্ধ জিতে নিতে সুইস যোদ্ধারা খুবই পারদর্শী ছিল। যুদ্ধ ক্ষেত্রে ওরা সর্বদাই নিজেদের প্রমান করেছিল।

তাছাড়া, অনেক সুইস যোদ্ধারা রোমানদের হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিজেদের প্রানও দিয়েছিল। তাই, সেই সময়ের ইউরোপের নানা জায়গায় রাজ পরিবার থেকে শুরু করে রাজপ্রাসাদ সুরক্ষার কাজে সুইস গার্ড নিযুক্ত হয়েছিল।

আবার চোদ্দ শতাব্দীতে ইউরোপের রেনেসাঁর সময়ে সেই সুইস যুবক যোদ্ধারা ফ্রান্সের রাজ পরিবারের সুরক্ষার কাজে যুক্ত হয়েছিল। ওরা নিজেদের প্রান দিয়েও রাজ পরিবারকে রক্ষা করার চেষ্টা করতো।

তাই, যখন ষোল শতাব্দীতে, ভ্যাটিকানের পোপের সুরক্ষার জন্যে আর্মি গঠন করার কথা হল – প্রথমেই, আল্পসের কোলে ছবির মতো সাজানো দেশটির, ছোট্ট অথচ বিশ্বস্ত, স্বনামধন্য ও পারদর্শী সেই সুইস যোদ্ধাদের ভ্যাটিকানে স্বাগত জানানো হয়েছিল। ঐ যোদ্ধাদেরকেই পোপের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বকে সুরক্ষা দেওয়ার কাজে নিয়োগ করার কথা হয়েছিল।

 ষোল শতাব্দীতে পোপ জুলিয়াস দ্যা সেকেন্ড, এই সুইস যোদ্ধাদের আমন্ত্রণ করেছিলেন। ওরা আল্পস থেকে পোপের সুরক্ষার জন্যে নেমে এসেছিল। ভ্যাটিকানে সুইস গার্ড নিযুক্ত হয়েছিল।

মাত্র ১৩০ জন সদস্যের এই সুইস গার্ডরা আসলে এক প্রাইভেট আর্মি  গ্রুপ -পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ও প্রাচীন আর্মি গ্রুপ, যা কিনা আজও সক্রিয়।

ভ্যাটিকান ও পোপের সুরক্ষার জন্যে এই আর্মি গঠন হয়েছিল। পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো আর্মির মধ্যেও এই সুইস গার্ড আর্মির নাম আসে। ষোল শতাব্দীতে এই আর্মির প্রাথমিক কাজ ছিল – পোপ ও তার বাড়ির সুরক্ষা করা।

তারপর, ১৯২৯ এ ভ্যাটিকান যখন স্বাধীন দেশ হিসাবে গণ্য হল – ভ্যাটিকানের সীমান্ত রক্ষা করাও সুইস গার্ডদের দায়িত্বে চলে এলো।

ভ্যাটিকানের এই সুইস আর্মির সদস্য হওয়ার প্রাথমিক শর্ত হল – গার্ড যেন সুইস ও ক্যাথোলিক হয়। ওরা যেন অবিবাহিত হয়। উচ্চতা ন্যূনতম পাঁচ ফুট আট ইঞ্চি হতে হবে, বয়স উনিশ থেকে ত্রিশের মধ্যে হতে হবে। তাছাড়া, সুইস মিলিটারি সার্ভিস পাশ করতে হবে। তারপর, সুইস মিলিটারি ট্রেনিং প্রাপ্ত দক্ষ গার্ডরাই ভ্যাটিকান ও পোপের সুরক্ষার কাজে যোগ্য বিবেচিত হবে।

The Pontifical Swiss Guard) (1).JPGপ্রাইভেট এই সুইস আর্মি প্রায় গত পাঁচশো বছর ধরে পাহারা দেওয়ার কাজে সক্রিয়। উজ্জ্বল হলুদ ও লাল, নীল রঙের পোশাকে ভ্যাটিকানের গম্ভীর ধার্মিক পরিবেশে ওরা যেন রঙ ঢেলে দেয়। এই রঙ গুলো ফ্লোরেন্সের প্রভাবশালী মেদিচি পরিবার থেকে এসেছে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপের চলচিত্রে অনেক কিছুর বদল হয়েছে, কিন্তু, অনেক কিছু আজও সময়কে জয় করে, গত পাঁচশো বছরের ঐতিহ্যের শেষ অবশিষ্টকে ধরে রেখেছে, আর এই সুইস গার্ডদের সেই প্রাচীন ঐতিহ্যের শেষ সূত্র বলা যায়। যারা আজও পোপকে রক্ষার কাজে নিবেদিত। তাই, ভ্যাটিকানের ঐতিহ্যের অঙ্গ এই সুইস গার্ডরাও দৃষ্টি আকর্ষণ করে, ওদের রঙিন উপস্থিতি মানুষকে কৌতূহলী করে। ভ্যাটিকানের ছবির সঙ্গে ওরা যেন অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে আছে।

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Southern-Europe, Travel, Vatican City and tagged , , , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান