কুমড়ো হাসির কথা ( Jack o’lantern of Halloween)

ইউরোপে অক্টোবর মাসে, দিন গুলো যখন  ছোট হতে শুরু করে দেয়, রাতের অন্ধকার ঘন ও দীর্ঘ হতে শুরু করে – ইউরোপ তখন হ্যালুইনের জন্যে সাজতে শুরু করে দেয়।

দোকানের ডিসপ্লেতে বা রাস্তার ধারের বাড়ির সামনে দেখা যায় – হলুদ পাকা কুমড়ো হাসির ছড়াছড়ি। দাঁত বের করা, কিম্ভূত, বিটকেল হাসি আঁকা ঐ কুমড়ো গুলো দেখলে যতটা না ভুতুরে মনে হয়, তার চেয়েও বেশী হাস্যকর লাগে।

বড় পাকা কুমড়োকে উপর থেকে কেটে নিয়ে, ভেতরের সমস্ত বিচি গুলো বের করে দিয়ে, চোখ, মুখ নাক, দাঁত ইত্যাদি কাঁটা হয় – ও ভেতরে এক মোমবাতি জ্বালিয়ে দেওয়া হয় – অন্ধকারে যখন ঐ কুমড়ো গুলো আলোকিত হয়ে যায় – দেখে সত্যি মনে হয়, কুমড়ো গুলো ভূতুড়ে দাঁত বের করে হাসছে।

ইউরোপে, কুমড়ো বা সবজীর গায়ে এই ধরণের ভুতুরে মুখ এঁকে, ভেতরে আলো জ্বেলে দেওয়ার রেওয়াজ প্রায় কয়েকশো বছরের পুরনো।

হ্যালুইনের সময়ে এই ধরণের বিশেষ ভুতুরে কুমড়ো লণ্ঠনকে – jack o’lantern বলা হয়। হ্যালুইনের সময়ে এই ধরণের কুমড়ো হাসি আঁকার প্রথা, প্রথম আয়ারল্যান্ডে শুরু হয়েছিল। আর এই কুমড়ো হাসির নাম কেন jack o’lantern হয়েছিল, সে নিয়েও ইউরোপের নানা জায়গায় অনেক লোক কথা, ও স্থানীয় গল্প প্রচলিত আছে।

ইউরোপের মানুষ বিশ্বাস করে – হ্যালুইনের দিনে ভৌতিক শক্তি জাগ্রত হয়, মৃতের আত্মারা এই দিনে পৃথিবীতে নেমে আসে ও ঘোরাফেরা করে। আর ইউরোপের অনেক জায়গায়, স্থানীয় মানুষের বিশ্বাসে আজও হয়তো এই গল্প স্থান করে নেয়। আর ওরা তাই, কুমড়ো কেটে, জানালার ধারে, jack o’lantern  জ্বেলে, একত্রিশ অক্টোবরের রাতে অশুভ শক্তিকে দূরে রাখে। কিংবা, পথচারীদের ভয় দেখানোর জন্যেও ঐ jack o’lantern  জ্বালানো হয়।

আবার দেখেছি, ইউরোপের নানা জায়গাতে এই হ্যালুইন উৎসবকে বিভিন্ন ভাবে পালন করা হয়।

দক্ষিণ ফ্রান্সের তুলুস শহরের সাধারণ মানুষের জীবন যাপনে হ্যালুইন নিয়ে খুব বেশী মাতামাতি দেখি নি, শপিং মল গুলো যদিও অক্টোবরের শুরুতেই হ্যালুইনের সাজে সাজতে শুরু করে দেয়।

কিন্তু, সাধারণত, উত্তর ইউরোপের দেশ গুলোতে, যেখানে রাতের অন্ধকারের রঙ ঘন কালো – অক্টোবরের কালো রাতে ভুত,আত্মা ইত্যাদির কল্পনা করে গা ছমছমে ভয়ের এক অনুভুতি পাওয়া যায়, হ্যালুইন উৎসব যেন সেখানের জাতীয় এক উৎসব। রাস্তার পাশে, বাড়ির ছাদে, দোকানে – প্রায় সব জায়গাতেই ঐ কুমড়ো লণ্ঠন দেখা যায়।

সেবার হ্যালুইনের সময়ে কোপেনহেগেনের তিভলি বাগানের হ্যালুইন উৎসবে দেখেছিলাম – কি ভাবে, স্থানীয় মানুষরা, নানা ধরণের ভুত, পেত্নী, ডাইনি ইত্যাদি সেজে এই উৎসব পালন করে। আর কয়েক কুইন্টেল কুমড়ো দিয়ে সারা বাগান সাজিয়ে দেয়। আর চারিদিকে ছড়ানো থাকে – কিম্ভূত  jack o’lantern , হ্যালুইনের মুখ্য আকর্ষণ যে ঐ কুমড়ো লণ্ঠন, সেটা স্পষ্ট বোঝা যায়।

যে কোন জায়গায়, বছরের এক একটা সময়ে, এক একটা উৎসব, ছুটি, মানুষের মনে এক এক রকম অনুভুতি জাগিয়ে তোলে।

হ্যালুইনের ঠাণ্ডা সন্ধ্যা যেন আলো ছায়ায়, গা ছমছমে ভয়ের এক অনুভুতি তৈরি করতে ভালোবাসে। আর সেই গা ছমছমে অনুভুতিকে সঙ্গী করে ইউরোপের মানুষ হ্যালুইনের সন্ধ্যা কাটাতে ভালোবাসে – কুমড়ো লণ্ঠন সেই সন্ধ্যাকে আরও ভূতুড়ে, আরও রহস্যময় করে তোলে।

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Travel, Uncategorized and tagged , , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান