দেখেছি, ফরাসী মহিলারা ঢাউস হ্যান্ডব্যাগ নিয়ে চলাফেরা করতে খুবই পছন্দ করে। অবশ্য শুধু ফরাসী মহিলারা কেন – পৃথিবীর সব দেশের সমস্ত মহিলারাই ব্যাগ ব্যবহার করে।
কিন্তু, ফরাসী মহিলাদের জন্যে, হ্যান্ডব্যাগ যতটা না প্রয়োজন, তার চেয়েও বেশি ফ্যাশন, স্টাইল। কিংবা, এক অবসেশনও বলা যেতে পারে। আর ঐ ব্যাগের ভেতরে এক চলমান সংসার নিয়ে ওরা চলাফেরা করে।
প্যারিসের বা ইউরোপের রাস্তার জনস্রোতের দিকে একটু চোখ রাখলেই দেখা যায়, ফ্যাশন, কিংবা স্টাইল সচেতন মহিলাদের রকমারি দামি ব্র্যান্ডের ডিজাইনার ব্যাগের সমাহার। হয়তো, অতি সাধারণ পোশাক – জিন্স ও টি শার্ট, কিন্তু, সঙ্গে এক দামি লাক্সারি ব্যাগ – ওটাই ওদের আসল স্টাইল স্টেটমেন্ট।
ফরাসী মহিলারা প্রচুর দাম দিয়ে, লাক্সারি ব্র্যান্ডের ব্যাগ কিনতে ভালোবাসে। যে ব্যাগ হয়তো সারাজীবন ব্যবহার করে, পরবর্তী প্রজন্মকেও দিয়ে যাওয়া যায়। কারণ, ব্যাগ কখনো ফ্যাশনের স্রোতের বাইরে যায় না। তাছাড়া, জামা কাপড়ের মতো, জীবনের বিভিন্ন সময়ে এর সাইজও বদলায় না – ঐ একটি ব্যাগ জীবনের সব সময়েই ব্যবহার করা যায়।
ফরাসিরা বলে, ফ্রান্সের লাক্সারি ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রির উন্নতির পেছনে নারীমুক্তির এক অতি বড় সংযোগ আছে। অতীতে, যে সময়ে মহিলারা ঘরে থাকতো, ঘরের যে কোন কোণে, ওদের নিজস্ব জিনিসপত্র রাখার জায়গার অভাব ছিল না।
কিন্তু, যখন উনিশ শতাব্দীর শেষে, ও বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে, ইউরোপে এলো শিল্প বিপ্লব, মহিলারা ঘরের বাইরে পা রাখতে শুরু করল, মহিলারাও কাজে যোগ দিল, দেশ বিদেশে ভ্রমণ করতে শুরু করল, মহিলাদের নিজস্ব জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ার জন্যে নানা ধরণের ব্যাগের প্রয়োজন হল।
তখন জন্ম হল, এক একটি লাক্সারি ব্যাগের ব্র্যান্ড, যেমন লুই ভিতন, গুচি, প্রাদা ইত্যাদি। ওরা শুধু যে সেলিব্রিটি কিংবা মডেলদের জন্যেই ব্যাগ তৈরি করল তা নয়, ওরা ইউরোপের মহিলাদের উপহার দিল রকমারি ব্যাগ। যে ব্যাগ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওদের স্টাইল, রুচি, ফ্যাশন, ব্যাক্ত্বিত্বের সঙ্গে জুড়ে যেতে শুরু করল। আর গত একশো বছর ধরে, সেই নামী ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রি গুলো সেই চেষ্টা বজায় রেখে চলেছে – মহিলাদের ব্যাগ অবসেশনকে ইন্ধন যুগিয়ে গেছে। আজও যোগায়। আর, আজ ফরাসী মহিলাদের কাছে – ব্যাগ মানে ব্যক্তিত্ব, স্টাইল, জীবন যাপনের এক অঙ্গ – যাকে বাদ দিয়ে এক পাও চলা যায় না।