সেভিলের রিভার পার্কের পথ ধরে (Paseo de Colon, Seville, Spain )

ইউরোপের শহর গুলোকে দেখে মাঝে মাঝে মনে হয় – আচ্ছা, ওরা কি একটুও অগোছালো হতে জানে না? রাস্তার ধারে একটু ময়লা, কাগজ, কলার খোসা কিংবা উপছে পড়া ডাস্টবিন? নিদেন পক্ষে দেওয়ালে একটু পানের পিক? ওরা কি এতোই পরিচ্ছন্ন? নাকি সবই সাজানো?

বিশেষ করে ইউরোপের টুরিস্ট কেন্দ্রিক শহর গুলোতে পরিচ্ছন্নতার দৃষ্টান্ত দেখে তো তাক লেগে যাওয়ার জোগাড় হয়। তারপর, ইউরোপের নদী গুলোকে দেখলে মন আরও ভালো হয়ে যায়। নদীর পরিষ্কার ঝকঝকে জল, শান্ত বয়ে চলা, আর পাশে সুন্দর সাজানো বাগানের পথ ধরে হাঁটার রাস্তা – রিভার ওয়াক, মনোরম অতি মনোরম, সন্দেহ নেই।

আর এপ্রিলের দুপুরে যদি স্পেনের সেভিল শহরে এসে, এই শহরের বিখ্যাত নদী গুয়াদাল্ভিকির নদীর তীরের শান্ত পার্ক কিংবা স্কোয়ার –  Paseo de Colon এর পথে গিয়ে উপস্থিত হই – অভিভূত হওয়া ছাড়া বোধহয় আর অন্য কোন উপায় থাকে না। এই পার্ক, সেভিল শহরের সমস্ত ব্যস্ততা, ক্লান্তি শুষে নিয়ে এক শান্ত সময় উপহার দিতে জানে – আর টুরিস্টরা সেই শান্ত সময়ের খোঁজ করতেই এই পার্কে আসে।

তারপর যদি, এপ্রিলের সেই স্প্যানিশ গরমের দুপুরে, অযাচিত ভাবে কয়েক জন স্প্যানিশ তরুণ কোঁকা কোলার এক নতুন পানীয়, যা তখনো বাজারে আসে নি – সেই পানীয়ের ঠাণ্ডা বোতল হাতে ধরিয়ে দিয়ে যায়, পানীয়ের বোতলে চুমুক দিতে দিতে এক কথায় বলা যেতে পারে – আমি বিমুগ্ধ, আনন্দিত।

তারপর তো বহুবার কোঁকা কোলার সেই পানীয়ের স্বাদে স্প্যানিশ সেই দুপুরকে ফিরে পেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সেই মুহূর্তের স্বাদ আর পাই নি। কখনো কখনো কোন কোন মুহূর্তের এক স্বাদ, এতোই মুখে লেগে থাকে, সেই স্বাদকে যেন কিছুতেই ফিরিয়ে আনা যায় না। হয়তো, সেই মুহূর্ত কে ফিরিয়ে আনা যায় না বলেই স্বাদ গুলোও মিলিয়ে যায়। কিংবা, আমরাই বদলে যাই।

যাইহোক, হয়তো সেভিলের এই নদী পার্ক বা স্কোয়ারে কলম্বাসের সময়ে প্রচুর নৌকো ও ছোট জাহাজের ভিড় লেগে থাকতো, কিন্তু, বর্তমানে এই জায়গায় টুরিস্ট বোট ছাড়া অন্য কোন নৌকোই চোখে পড়ে না। দীর্ঘ এই পার্ক সেভিল সেতু থেকে শুরু হয়ে, সোনালি স্তম্ভ Toro de Oro এর কাছে এসে থেমেছে।

তাছাড়া, আধুনিক ভাস্কর্য, মূর্তি, প্রচুর গাছ গাছালি দিয়ে সাজানো, বর্তমানের এই পার্ক বহু স্প্যানিশ পরিবারের ছুটির দুপুর থেকে বিকেল গুলো কাটানোর এক প্রিয় জায়গা। পার্কের রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে নদীর ঐ পারে চোখ রাখলে, দেখা যায়, আন্দালুসিয়ার বিশেষ ধরণের ঘর বাড়ী, ফুলের গাছ দিয়ে সাজানো লোহার বেলকনি – সাজানো জীবন যাপনের এক ঝলক।

অনেকেই আবার তাদের সুন্দর বেলকনিকে কফি শপে পরিণত করেছে। ঐ বেলকনি রেস্টুরেন্ট গুলোয় বসে, গুয়াদাল্ভিকির নদীর বিস্তারকে দেখতে দেখতে কফির কাপে চুমুক দেওয়া, নদীর হাওয়ায় জুড়িয়ে যাওয়া – এও সেই স্প্যানিশ ছুটির বিকেলের এক বিলাসিতা। স্প্যানিশরা দিনের শেষে সেই বিলাসিতার লোভ কিন্তু ছাড়তে পারে না।

দেখেছি বহু দেশ, নানা মানুষ, তাদের জীবন যাপন, দর্শন, জীবন বোধ। দেখে মনে হয় – মানুষের সুখ, দুঃখ, সমস্যা, হাসি, কান্না, চিন্তা, দুশ্চিন্তার ধরণ গুলো একই, কিন্তু, সেই সমস্যা গুলোকে দেখার দৃষ্টি ভঙ্গী গুলো আলাদা, সমাধান গুলো আলাদা, রুচি বোধ আলাদা। আর আলাদা বলেই পৃথিবীর নানা দেশ, তার মানুষ, তাদের জীবন যাপন দেখতে যাওয়ার এক কৌতূহল রয়েই যায়।

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Southern-Europe, Spain, Travel and tagged , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান