ভ্রমণ পরিকল্পনা

Map Reading in European Cities (5)

নতুন এক দেশ, বিদেশ – সেখানে সব কছুই অচেনা। হ্যাঁ, ভ্রমণ মানেই অচেনাকে জানা, অজানাকে চেনা। ভ্রমণ মানে পদে পদে বিপদ, সে নানা রকমের বিপদ হতে পারে, তা বলে ভ্রমণের আকর্ষণ ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে কম হয় না। অজানা কে আবিষ্কারই তাদের আনন্দ দেয়। তবুও সেই অচেনা ও অজানাকে জানার জন্যেও এক ধরণের পরিকল্পনা প্রয়োজন – সে সময় থেকে নিয়ে শুরু করে অর্থ সব কিছু নিয়েই এক সুপরিকল্পনা দরকার।

কিন্তু, সেই অচেনাকে জানার ধাক্কা যদি সেই অচেনা অজানা দেশে পৌঁছে গিয়ে সামলাতে হয় – তার চেয়ে সেই দেশটি সম্বন্ধে আগে থেকেই অনেক কিছু জেনে নেওয়া ভালো – বিশেষ করে সেই দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক পরিবেশ, আবহাওয়া, অপরাধ ইত্যাদি থেকে শুরু করে মোটামুটি সব কিছুই একটু জেনে নেওয়া খুবই জরুরি।

তারপর ভ্রমণ গাইড বই তো আছেই – মানে কোথায় যাবো, কি কি দেখবো, কি খাবো, বাস, ট্রাম, না নৌকো চড়ে দেশটি দেখবো, সে গুলো তো প্রাথমিক ভাবে জানতেই হয়। তাছাড়া, সেই দেশের বর্তমান পরিস্থিতিও জানাটা খুবই জরুরি। বিশেষ করে আমাদের মতো মানুষ – যারা আগে থেকেই হোটেল থেকে শুরু করে মিউজিয়ামের টিকিট পর্যন্ত বুক করে নিয়ে, এক সুপরিকল্পিত ভ্রমণ তৈরি করি, তাদের পক্ষে বিদেশ বিভূঁইয়ে এক মুহূর্ত সময় অকাজে নষ্ট করা মানে প্রচুর ক্ষতি – আর্থিক থেকে শুরু করে সময় দুইয়েরই ক্ষতি।

অবশ্য, আমাদের মতো সুপরিকল্পিত ভ্রমণ পিপাসুদের সমস্ত পরিকল্পনায় বরফ ঠাণ্ডা জল ঢেলে দিতে সেই দেশের রাজনেতার একটি রাতের একটি ঘোষণাই যথেষ্ট। যেমন ধরা যাক – এক অচেনা দেশে পৌঁছনর ঠিক আগেই এয়ারপোর্ট থেকে সেই দেশের কিছু কারেন্সি কিনে নিলাম – হোটেল যদিও বুক করা আছে, কিন্তু, পৌঁছনোর পরেই ঐ হোটেলে পেমেন্ট করতে হবে, তাছাড়া ঐ দেশে ঘোরা ফেরা করার জন্যে আরও কিছু কারেন্সি দরকার – তাই একটু বেশী পরিমানেই কারেন্সি কিনে খুশ মেজাজে রইলাম।

পরের দিন হোটেলে পৌঁছে দেখি, সেই সব কারেন্সি রাতারাতি অচল হয়ে গেছে। না হোটেলে থাকতে পারবো, না ঘোরাফেরা করতে পারবো। তখন সেই দেশের লোকেরা গাল ভরা হেসে বলতে শুরু করল – ও মা সে কি গো, তোমরা জানো না? আমরা যে রাতারাতি কেশ লেস ইকোনমির দেশ হয়ে গেছি, আমরা এপ করি, পেটিএম করি। আচ্ছা তোমাদের কাছে কার্ড নেই?

তখন ওদের কি করে বোঝাই – ওরে তোদের দেশে তো আমাদের দেশের ব্যঙ্কের কার্ড চলে না, আমাদের কাছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড নেই।

কথার পিঠে কথা চাপাতে ঐ দেশের লোকের জুড়ি মেলা ভার – এ বাবা, বিদেশ বিভূঁইয়ে ঘুরতে গিয়ে একটা ইন্টারন্যাশনাল কার্ড রাখতে পারো না? কোন দেশ থেকে এসেছো তোমরা? ইত্যাদি নানা প্রশ্নের ধাক্কা সামলাতে হতে পারে। তারপর যদি সেই দেশের অচল টাকা বদলানোর জন্যে ব্যঙ্কের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয়, তখন তো বেড়ানোর সমস্ত পরিকল্পনা মাথায় উঠবেই। অবশ্য এই ধরনের আজব পরিস্থিতি খুবই বিরল – সে এক মাত্র শিব ঠাকুরের আপন দেশেই হতে পারে।

অবশ্য একটা ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড অনেক ঝামেলা থেকেই বাঁচায় – সেবার যখন ভোর রাতে লিথুনিয়ায় পৌঁছেছিলাম, ষ্টেশনের কারেন্সি কেনার অফিসটি বন্ধ ছিল। বাঁচিয়েছিল সেই ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড। লিথুনিয়ার কারেন্সিকে চোখে না দেখেও ঐ দেশটিকে দিব্যি দেখে নিয়েছিলাম।

যাইহোক, তাছাড়া, রাজনৈতিক অস্থিরতা আছে, যে কারণে আমরা গ্রীস বেড়ানোর পরিকল্পনা করেও বাদ দিয়েছিলাম। যে সময়ে আমরা গ্রীস বেড়ানোর পরিকল্পনা করছিলাম – গ্রীসের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল উত্তাল। যে কোন সময়ে বাস ট্রাম বন্ধ, ধর্না ধর্মঘট লেগেই ছিল, যে কোন যানবাহন সঠিক সময়ে চলাচল করছিল না – আমরা তো রিপোর্টার নই, টুরিস্ট, তাই এই যে দেশে বেড়াতে যাওয়া যায়, সেই দেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক অচলাবস্থা, অস্থিরতা আমাদেরই বিপদে ফেলে বেশী।

তারপর, যেমন ধরা যাক, যে সময়ে ক্রোয়েশিয়ায় যুদ্ধ চলছিল – টুরিস্ট এক্কেবারেই ঐ দেশে যেত না, কিন্তু, যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে, ওরা যখন ওদের দেশকে ঢেলে সাজালো, সে রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে সিস্টেম – সবই সাজালো, এখন ক্রোয়েশিয়া পৃথিবীর যে কোন প্রান্তের টুরিস্টদের প্রিয় গন্ত্যব্যের মধ্যে অন্যতম বলা যায়।

যাইহোক, অনেক দেশ বিদেশ দেখে একটাই উপলব্ধি হয়েছে – যে কোন জায়গায় যে কোন পরিস্থিতি হতে পারে। যা আগে থেকে জেনে রাখা খুবই মুশকিল। তাই বেড়ানোর জন্যে সমস্ত হাতিয়ারে শান দিয়ে রাখা খুবই জরুরি।

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Travel and tagged , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান