বেলজিয়ামের রাজধানী শহর কেন্দ্রের বিশাল এই সবুজ পার্ক, শুধু যে একটি সবুজ জায়গা তা নয় – বলা যায়, ব্রাসেলসের এই পার্ক – Parc du Cinquantenaire বা Park of the fiftieth anniversary বেলজিয়ান জাতীয়তার এক প্রতীক। স্থানীয়রা অনেকে আবার একে Jubelpark, ও বলে। বেলজিয়ামের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে, উনিশ শতাব্দীর শেষের দিকে, এই পার্ক ও পার্ককে ঘিরে স্থাপত্য গুলো তৈরি হয়েছিল।
ব্রাসেলস শহর কেন্দ্রে এই পার্কের চরিত্রে, কেমন যেন এক খোলামেলা ভাব অনুভূত হয় – বিশাল এক বিজয় তোরণ, যার দুই পাশে মিউজিয়াম বিল্ডিং ছড়িয়ে আছে, যেন টুরিস্টদের জন্যে দুই হাত ছড়িয়ে এক রাজকীয় স্বাগতমের আয়োজন করে।
লোহা, কাঁচ, ও পাথর দিয়ে তৈরি এই বিশাল তোরণ বেলজিয়ামের শিল্প ও অর্থনৈতিক উন্নতির প্রতীক। আসলে, আগে শহরের মধ্যে এই বিশাল জায়গা বেলজিয়ামের মিলিটারিদের প্যারেডের জায়গা ছিল, কিন্তু, বিংশ শতাব্দীতে এই জায়গা জনসাধারণের জন্যে সহজ সময় কাটানোর জন্যে খুলে দেওয়া হয়েছিল।
তাছাড়া, ইউরোপে যে জায়গাই International Exposition এর ঠিকানা হয়, সেই জায়গার কোন এক বিশেষত্ব থাকে – সে বিশালতার দিক দিয়ে হোক, বা স্থাপত্যের দিক দিয়েই হোক – বিশ্ব প্রদর্শনীতে আশ্চর্য কিছু করে দিয়ে, সমগ্র বিশ্বের মানুষদের তাক লাগিয়ে দেওয়ার জন্যে, সেই জায়গার মানুষ যথেষ্ট চেষ্টা করে – আর ব্রাসেলসও সেই চেষ্টাই করেছিল – তার ফল স্বরূপ এই বিশাল পার্ক ও স্থাপত্য।
শুনেছি, গরমের সময়ে এই পার্ক ব্রাসেলসের স্থানীয় মানুষদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা – সেই সময়ে কনসার্ট, এক্সিবিশন ইত্যাদি নিয়ে এই পার্ক বেশ জমজমাট থাকে, কিন্তু, অক্টোবরের ধূসর মেঘলা সেই দিনে Cinquantenaire পার্কে আমরা ছাড়া খুব একটা লোকজন চোখে পড়ে নি। আর, এমনি মেঘলা দিনে, কণকণে ঠাণ্ডায় কয়েক জন মালী, পার্কে আসন্ন মরশুমের জন্যে ফুলগাছের মাটি তৈরিতে ব্যস্ত ছিল।
অক্টোবরের দুপুরে যখন এই বিশাল পার্কের পথ ধরে হেঁটে ছিলাম, দিনের রংটি ছিল খুবই ধূসর – কিন্তু, ছবির মতো সাজানো বড় বড় গাছের সারির নীচে লুটিয়ে পড়া হলুদ কমলা শুকনো ঝরা পাতা গুলো ফুটিয়ে তুলেছিল অপূর্ব এক রঙিন ছবি, প্রকৃতি যেন সেই দিনের ধূসর প্রেক্ষাপটকে তার মানানসই রং দিয়ে এঁকে চলেছিল।