দিউ দুর্গের সূর্যাস্ত (The Diu Fort, Diu, India)

শহরের ভিড়, গতানুগতিক জীবনের গতি, যানজট, উৎকণ্ঠা সব কিছু থেকে দূরে – যদি এক শান্ত বিকেল, আরব সাগরের ওপারের এক রক্তিম সূর্যাস্ত উপহার পেতে হয় – তবে দিউ দুর্গের জুড়ি মেলা ভার।

শুধুই কি সূর্যাস্ত দেখা! – সঙ্গে থাকে পর্তুগীজ ইতিহাসের এক অধ্যায় – যে অধ্যায় পর্তুগীজরা ভারতবর্ষে ফেলে গিয়েছিল। পর্তুগীজরা প্রায় চারশো চব্বিশ বছর ভারতবর্ষে ছিল – যা কিনা পৃথিবীর ঔপনিবেশিক শাসনের ইতিহাসে এক দীর্ঘতম শাসনকাল – আর তারই প্রমান দিউয়ের এই বিশাল দুর্গ।

যাইহোক, নভেম্ভরের শুরুর দিকে দিউয়ে শুরু হয়ে যায় টুরিস্ট মরশুম, থাকে চমৎকার আবহাওয়া। আর সেই চমৎকার আবহাওয়া অনেকটা ঠিক পর্তুগালের গরমের সময়ে যেমন হয়, ঠিক তেমনি থাকে, তাই, ষোল শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে তৈরি এই পর্তুগীজ দুর্গে পা রেখেই মনে হতে পারে – পর্তুগালের কোন এক অংশে চলে আসি নি তো? গঠনশৈলীতে পর্তুগীজ স্থাপত্যের ছাপ খুবই স্পষ্ট – গত সাড়ে চারশো বছরেও আরব সাগরের নোনা জল এই দুর্গের খুব বিশেষ একটা ক্ষতি করতে পারে নি। আজও লাইট হাউসে লাইট জ্বালানোর ব্যবস্থা আছে।

দুর্গের চারিদিকে দিউ কতৃপক্ষের যত্নের ছাপও স্পষ্ট বোঝা যায়। দিউয়ে পর্তুগীজদের তৈরি এই দুর্গ প্রায় লোকচক্ষুর আড়ালেই ছিল – কিন্তু যখন পর্তুগাল সরকার, পর্তুগালের বাইরে পর্তুগীজদের তৈরি সাতটা আশ্চর্যের এক লিস্ট তৈরি করেছিল – সেই লিস্টে দিউয়ের এই দুর্গটি ছিল। সেই সময়েই পর্তুগাল তথা বিশ্বের মানুষের কাছে দিউয়ের এই দুর্গটি গুরুত্ব পায়, নজরে আসে – ও বিশ্বের ট্যুরিজম ম্যাপে এই দুর্গের মর্যাদাপূর্ণ এক স্থান হয়ে যায়।

অবশ্য এই পর্তুগীজরা এই দুর্গ তৈরির বহু আগে ভারতবর্ষের বহু রাজা ও তার সাম্রাজ্যের ইতিহাস জড়িত ছিল – যা কিনা পর্তুগীজদের প্রতিপত্তিতে হারিয়েই গেছে বলা যায়। মুঘল সম্রাট হুমায়ূনের আক্রমণের হাত থেকে বাঁচার জন্যে গুজরাটের সুলতান সাঁ বাহাদুর পর্তুগীজদের সাহায্য চেয়েছিল – আর পর্তুগীজরা সেই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিল, বহুদিন ধরে ব্যবসার জন্যে এই জায়গায় ওরা আক্রমন করে চলেছিল, সমুদ্র কেন্দ্রিক মসলার ব্যবসার জন্যে ভারতবর্ষে পর্তুগীজদের এক শক্ত ঘাঁটির দরকার ছিল – তাই সুযোগ পেয়েই পর্তুগীজরা সময় নষ্ট না করে সুলতান ও মুসলিম রাজত্বের সমস্ত দুর্গ ভেঙ্গে দিয়ে নিজেদের কেল্লা তৈরি করে নিল।

তবে ইতিহাস যাই হোক না কেন, আজকের দিউ কেল্লার ধ্বংসাবশেষ কিন্তু নির্জনতা প্রিয় টুরিস্টদের এক আশ্চর্য ঠিকানা। ঐতিহাসিক দুর্গের প্রান্তে দাঁড়িয়ে আরব সাগরের ওপারে রক্তিম সূর্যাস্ত দেখা – এর চেয়ে রোম্যান্টিক আর কি হতে পারে? প্রাচীন দুর্গ, মেঘ রাঙা বিকেল, আরব সাগরের উদারতা – সব মিলেমিশে এক আশ্চর্য ছবি তৈরি হয় – যে ছবির সাক্ষী হয়ে নিজেকে ধন্য বলে মনে হয়।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Asia, Diu, India, Travel and tagged , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s