ঠিক দুপুরে মিউনিখের স্কোয়ারে (Marienplatz, Munich, Germany)

দুপর বারোটার ঠিক আগেই মিউনিখের মেরিস স্কোয়ারে প্রচুর মানুষ জমায়েত হয় – আর সবারই মুখ একই দিকে থাকে – New Town Hall এর চূড়ার দিকে সবাই তাকিয়ে থাকে। শুধু যে, মারিস স্কোয়ারের পাশে গথিক স্টাইলে তৈরি টাউন হলই প্রধান আকর্ষণ তা নয়, আসলে, ঠিক দুপুর বারোটায় টাউন হলের চূড়ার ঠিক নীচের ঘরে সাজানো বড় যান্ত্রিক পুতুল গুলো জ্যান্ত হয়ে ওঠে – স্থানীয় ভাষায় যাকে বলে Rathaus-Glockenspiel ।

ঠিক দুপুর বারোটায়, দুই ধাপে সাজানো পুতুল গুলো জীবন্ত হয়ে উপস্থিত জনতাকে ষোল শতাব্দীর দুই গল্পের দৃশ্য দেখায় – এক ধাপে স্থানীয় ডিউকের বিবাহ উৎসবের দৃশ্য ও আরেক ধাপে অশ্বারোহী যোদ্ধার যুদ্ধের দৃশ্য – যেখানে এক যোদ্ধা বেভেরিয়া ও আরেক যোদ্ধা Lothringen , এই দৃশ্যে সর্বদাই বেভেরিয়ার অশ্বারোহীই বিজয়ী হয়। আর এই স্কোয়ারে দাঁড়িয়ে পুতুল অভিনিত ঐ সমস্ত দৃশ্যের সাক্ষী হওয়া যায়।

টাউন হলের এই দৃশ্য মিউনিখ ভ্রমণ তালিকার প্রথম দিকেই থাকে – তাই, দুপুরে মিউনিখ সিটি সেন্টারের কাছাকাছি থাকলে কোন টুরিস্টই সেই দৃশ্য এড়িয়ে যেতে পারে না। বেশ আগে থেকেই প্রচুর টুরিস্টের অপেক্ষারত ব্যবহারে বোঝাই যায় – এখানে কিছু একটা হতে চলেছে।

চারিদিক দিকে প্রাচীন স্থাপত্যে ঘেরা মিউনিখের এই স্কোয়ারের মধ্যেই দেখা যায় মেরীর স্তম্ভ – Marian column। অবশ্য, এই স্কোয়ারের চারপাশে চোখ রেখে যা দেখা যায় তার প্রায় অনেক অংশই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে বোমার আঘাতে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল – যুদ্ধের পরে সবই আবার নতুন করে তৈরি হয়েছিল। তবে যুদ্ধে টাউনহলের খুব একটা ক্ষতি হয় নি।

মারিস স্কোয়ারে আকাশ ছোঁয়া নিউ টাউন হলের চূড়া এতোই রাজত্ব করে, অনেকেই পুরনো টাউন হলের কথা ভুলেই যায়। অথচ, চোদ্দ শতাব্দীর শুরুর দিকে তৈরি পুরনো টাউন হল মারিস স্কোয়ারের আরেক আকর্ষণ – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে এই ওল্ড টাউন হল মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তবুও গথিক স্টাইলে তৈরি কিছু স্থাপত্য ও মূর্তি সংরক্ষণ করে পুরনো টাউন হলকে পুনরায় তৈরি করা হয়েছিল।

যাইহোক, এই মারিস স্কোয়ারকে মিউনিখের হৃদস্পন্দন বলা যায়। এক সময় যে জায়গায় প্রচুর জমায়েত মানুষ হিটলারের রক্তগরম করা ভাষণে ছিল উত্তাল, জ্বলন্ত ঘৃণার উত্তাপে নিজেদেরকে যখন তারা সেঁকে নিচ্ছিল – একবারও কি তাদের মনে হয় নি, যে জায়গা থেকে তারা হিংসার পথে পা রেখেছিল, পৃথিবীর মানুষ তাদের কাউকেই মনে রাখবে না – এমনকি তাদের দেশের মানুষও একদিন রক্তের অক্ষরে লেখা তাদের নাম বার বার মুছে দিতে চাইবে, পরবর্তী প্রজন্ম তাদের নাম মুখে আনতেও লজ্জায় কুঁকড়ে যাবে? আর তাইতো যে জায়গা থেকে ডিক্টেটর হিটলারের জন্ম হয়েছে, সেই জায়গার কোথাও মিউনিখের সেই লজ্জাজনক অধ্যায়ের ছিটেফোঁটা নেই – বরং, মিউনিখের প্রাণচঞ্চল মানুষের উষ্ণতায়, উজ্জ্বলতায়, স্বাধীনতায়, হাসি আনন্দে ভরপুর সেই জায়গা।

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Germany, Travel, Western-Europe and tagged , , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান