মৌমাছিরা সব গেল কোথায়? (Apiculture in France )

মৌমাছিরা কোথায় গেল? সে নিয়ে ভাবতে বসে, ফরাসী মধু শিল্পীদের মাথায় হাত। চাষের কাজে কীটনাশক ব্যবহারের জন্যে গত দশ বছরে প্রায় নয় বিলিয়নের কাছাকাছি মৌমাছি মারা গেছে, ভাবা যায়? মৌমাছিদের জন্যে তৈরি কাঠের ঘর গুলো খালিই পড়ে আছে। মৌমাছি না থাকলে ফুলের রেনু কে বহন করবে? মানুষের জন্যে কে প্রকৃতির আশ্চর্য অবদান ‘মধু’ তৈরি করবে?

ছোট্ট ঐ পতঙ্গের চঞ্চল পাখায় কি অসীম ক্ষমতা – ফ্রান্সের অর্থনীতিতেও ঐ পতঙ্গের যথেষ্ট অবদান। ফ্রান্স যেমন পারফিউমের জন্যে বিখ্যাত, তেমনি বিখ্যাত মধুর জন্যে – অবশ্য ফ্রান্সে তৈরি মধু ফ্রান্সের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

ফ্রান্সে গ্রামের দিকে অনেকেই মৌমাছি পালন করে – কিন্তু, কখনো অধিক শীতে মৌমাছিরা মধু সংগ্রহে বেরোতে পারে না, আবার কীটনাশকে অনেকে মারাও যায়। আর সব মিলিয়ে ফ্রান্সে গত কয়েক বছরে মধু উৎপাদন নাকি উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে গেছে।

আর সেই জন্যেই অনেক মধু শিল্পীরা এগিয়ে এসে মৌমাছি সম্বন্ধে জন সচেতনতা তৈরির জন্যে ও নানান জায়গায় মধু পালনের জন্যে উৎসাহ দেয়। সামারের ছুটিতে অনেক মৌমাছি ফার্মে সাধারণ মানুষের খোলা নিমন্ত্রন থাকে – সেখানে ফ্রান্সের নানা ধরণের মধু চাখা যায়, চাইলে কেনাও যায়।

যদিও, মৌচাকের পাশে ছেলেবেলায় মৌমাছির হুল ফোটানোর কথা মনে ছিল, কিন্তু, মধুর মিষ্টতার কথা, স্বাস্থ্যকর অবদানের কথাও তো অনস্বীকার্য, তাই তুলুস থেকে কিছু দূরে তেমনি এক মৌমাছি ফার্মে এক ছুটির দুপুরে হানা দিলাম।

প্যারিসে তো অনেকে নিজেদের বেলকনি, উঠোন কিংবা ছাদেও মৌমাছি পালন করে – প্যারিসের বিখ্যাত রাস্তা Champs-Élysées যখন মানুষের যাতায়াতে সরগরম, Champs-Élysées এর পাশের বিশাল পাঁচ তারা হোটেলের ছাদে মৌমাছি পালন হয়। দেখা গেছে ফ্রান্সের গ্রামের তুলনায় প্যারিস শহরের ভেতরে বেশী মধু উৎপাদন হয়। প্যারিসের অনেক নামী রেস্টুরেন্ট, হোটেল নিজেদের বি হাইভ রাখে, মৌমাছি পালন করে, মধু উৎপাদন করে – অতিথিদের পরিবেশন করে।

আসলে গ্রামের দিকে ল্যাভেন্ডার, সূর্যমুখী থেকে শুরু করে যে কোন ফুলের এক বিশেষ সময় আছে, মৌমাছি সেই সময়েই মধু সংগ্রহ করতে পারে – কিন্তু প্যারিসের মানুষ প্রকৃতির রং পছন্দ করে, তাই সারা বছরই প্যারিসের নানাণ পার্ক, মানুষের বাড়ীর উঠোনে বা বেলকনিতে কোন না কোন ফুল ফোটে – তাই মৌমাছিরা সারাবছরই ফুল পায়, তা ছাড়া প্যারিস শহরের উষ্ণতায় শীতের সময়েও মৌমাছি ঘর ছেড়ে বেরোতে পারে। ফুলের মরশুমে একটা একটা বি হাইভ দিনে প্রায় তিন কিলো মধু উৎপাদন করতে পারে।

ঐ বি হাইভ গুলো মৌমাছি পালন ও মধু উৎপাদনের পদ্ধতিকে আরও সহজ করেছে। তবে, একটা ব্যাপার তো রয়েই যায় – বি হাইভ গুলো থেকে মধু বের করার কাজ। সেই চটচটে ব্যপারটা লেগেই থাকে, তারপর আবার মধু বের করতে গিয়ে ধোঁয়ায় অনেক মৌমাছি মারাও যায়। অনেক সময় একবার হাইভ ছেড়ে গেলে ফিরেও আসে না।

সেই সমস্যারও সমাধান খুঁজে বের করেছে Cedar Anderson ও তার বাবা Stuart (www.honeyflow.com) – তাদের তৈরি বি হাইভের ডিজাইনে, শুধু বোতল নিয়ে মৌমাছিদের বাক্সের কাছে যেতে হয়, মৌমাছিদের কোন ক্ষতি না করে, বি হাইভ থেকে পাইপ লাগিয়ে দিয়ে মধু বের করা যায়। মৌমাছিদের ক্ষতি না করে, হাতে চটচটে মধু না লাগিয়ে – মধু বের করা, যা ছিল মধু শিল্পীদের স্বপ্ন, সেটা সম্ভব হয়েছে ওদের তৈরি মৌমাছি বাক্সে।

মানুষ তার শত্রু কীটপতঙ্গকে মারতে গিয়ে, বন্ধু পতঙ্গ মৌমাছিকেও মেরে ফেলছে! ফ্রান্সের মধু শিল্পীরা বলে, অচিরেই মৌমাছিদের বাঁচিয়ে রাখার ব্যবস্থা না করলে – পরবর্তী প্রজন্মকে আসল মধু দেখতে হলে মিউজিয়ামে না যেতে হয়।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, France, Travel, Western-Europe and tagged , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s