কাঁচে আঁকা রঙিন গল্প (Stained glass windows in European Cathedrals)

ফ্রান্সের ক্যাথিড্রাল গুলোর ভেতরে ঢুকলে এক অদ্ভুত আলো আঁধারির মুখোমুখি হতে হয়। বাইরে, হয়তো সামারের দুপুরের গনগনে রোদ্দুর, কিংবা শীতের ধূসর বৃষ্টি ভেজা বিকেল – ক্যাথিড্রালের ভেতরে সারা বছরই কিন্তু এক মধ্যযুগীয় রহস্যের হাতছানি।

আর ভেতরের সেই মধ্যযুগীয় পরিবেশে ইন্ধন যোগায় বিশাল বিশাল কাঁচের জানালায় আঁকা বাইবেলের ঘটনাবলীর রঙিন ছবি, বাইরের দিনের আলো সেই দৃশ্য গুলোকে আরও উজ্জ্বল, রঙিন করে তোলে, স্বভাবতই চোখ চলে যায় সেই অপূর্ব কাঁচ শিল্পের দিকে। ভেতরে আলো ছায়া, রঙিন ছবি – সব মিলে মিশে এক প্রাচীন স্বপ্নময় পরিবেশ তৈরি হয়।

সাধারণত, জানালা বাইরের দৃশ্যের সঙ্গে পরিচয় করায়, কিন্তু, মধ্যযুগের ক্যাথিড্রালের জানালায় এই ধরণের রঙিন কাঁচের ব্যবহারের মূল উদ্দ্যেশ্য ছিল –অবশ্যই সৌন্দর্য, এবং বাইরের দৃশ্যের সঙ্গে পরিচয় না করানো, দৃষ্টিকে বাঁধা দিয়ে ছবিতে বাইবেলের গল্প বলা, বিশেষ করে সেই সময় যারা পড়তে লিখতে পারতো না, তাদের সঙ্গে বাইবেলের পরিচয় এই ধরনের কাঁচ শিল্পের মাধ্যমেই হোতো।

তাছাড়া, এই ধরণের রঙিন কাঁচ দিয়ে সূর্যের আলোকে সুন্দর উপায়ে নিয়ন্ত্রিত করে ক্যাথিড্রালের ভেতরে আনা যায়। ফ্রান্সে এমনও অনেক মানুষ আছে, যারা ঠিক কোন ক্যাথিড্রালে কি ধরণের রঙিন কাঁচ ব্যবহার হয়েছে, কোন গল্প আঁকা হয়েছে তা নিয়ে রীতিমত গবেষণা করে।

ফ্রান্স তথা ইউরোপের ক্যাথিড্রাল গুলোয় এই কাঁচ শিল্পের ব্যবহার এতোই প্রাচীন, যে ঠিক কবে থেকে এই ধরণের কাঁচ শিল্পের সূচনা হয়েছিল, তা সঠিক জানা যায় না। তবে, মধ্যযুগের ইউরোপে এই ধরণের কাঁচ শিল্প খুবই প্রচলিত ছিল, আর গথিক স্থাপত্যে এই ধরণের কাঁচের ব্যবহার আরও বেশী লক্ষ্য করা যায় – বিশেষ করে ফ্রান্স, জার্মানির ক্যাথিড্রাল গুলোতে এই ধরণের কাঁচ শিল্প বিশেষ ভাবে প্রচলিত ছিল। ফ্রান্সে রেনেসাঁর পর থেকে এই ধরণের কাঁচ শিল্পের ব্যবহার হ্রাস পেতে শুরু করে দেয়।

কোন কোন ক্যাথিড্রালের বয়স তো কয়েকশো বছর, সেই সঙ্গে সেই কাঁচের রঙিন জানালা গুলোরও বয়স শত শত বছর – কিন্তু, কোথাও কাঁচ গুলোর উজ্জ্বল রং একটুকুও মলিন হয় নি। উচ্চ তাপমাত্রায় গলন্ত কাঁচে নানা রঙের ধাতু মিলিয়ে মিলিয়ে তৈরি এই এক একটি ছবি যেন সময়কে জয় করে নিয়েছে।

গত শতাব্দীতে ইউরোপ দুই দুইটি বিশ্ব যুদ্ধ দেখেছে, ক্যাথিড্রাল গুলোর কাঁচেও সেই যুদ্ধের আঁচ পড়েছিল – কিন্তু, নিখুঁত ভাবে সেই রঙিন কাঁচ গুলোর ছবি পুনরুদ্ধার করে শিল্পের মর্যাদা বজায় রাখার চেষ্টা হয়েছে। সাধারণত বাইবেলের গল্প যেখানে স্থান পায়, সেখানে বার্সিলোনার Sagrada Família য় জানালার রঙিন কাঁচে বিমূর্ত শিল্প স্থান পায়।

আর ইউরোপের প্রাচীন ক্যাথিড্রাল গুলোর জানালায় যে যে নাম না জানা মানুষের আঁকা প্রাচীন শিল্প সৌন্দর্য যোগ করেছে, গল্প বলেছে, তাদের নাম না জানলেও  তাদের কাজ যে শিল্পের ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে। পৃথিবী সবসময়ই মানুষকে মুছে দিয়ে তার কাজকে সযত্নে রেখে দিতে ভালোবাসে।

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Travel and tagged , , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান