শেষ ফেব্রুয়ারির সেই সুইস সন্ধ্যায়, আল্পস ছুঁয়ে আসা হাওয়ায় ছিল এক শিরশিরে ঠাণ্ডা, ভেজা ভেজা অনুভূতি। শেষ বিকেলে এই সুইস শহরে গিয়ে ধূসর মেঘলা সময়ের মুখোমুখি হয়েছিলাম, কিন্তু, সন্ধ্যা ঘনাবার সঙ্গে সঙ্গে যেন কোন এক যাদু মন্ত্র বলে, সমস্ত পরিবেশ বদলে গেল। আর সেই শিরশিরে ঠাণ্ডা অনুভূতিতে যোগ হল – ধীরে ধীরে আলোকিত হয়ে ওঠা সেই সুইস শহরের সুইস সন্ধ্যার এক অদ্ভুত রোমাঞ্চকর অনুভূতি।
লেক লুসার্নের উপরের কাঠের সেতুতে একে একে জ্বলে উঠেছিল হলুদ নরম আলো – যার আলোকিত ছায়া পড়ে লেকের ধূসর জলে রঙিন ছবি তৈরি হচ্ছিল, হাওয়া ও হালকা স্রোত যদিও সেই রঙিন ছবি বারবার মুছে দিয়ে নতুন নতুন ছবি তৈরি করছিল।
লুসার্ন লেকের কালো জলে তখনো বেশ কয়েকটা রাজহাঁস সাঁতার কাটছিল। সুইস স্থানীয়দের মতে, সেই বিশাল রাজহাঁস গুলোর পূর্বপুরুষরা নাকি সতেরো শতাব্দীতেই সুইজারল্যান্ডে চলে এসেছিল – সুইস গার্ডরা ফ্রান্সের রাজা লুই চোদ্দোর সুরক্ষার সমস্ত ভার নিয়েছিল, তাই, ফরাসী রাজা লুই চোদ্দ খুশী হয়ে সুইজারল্যান্ডকে রাজহাঁস উপহার দিয়েছিল। সেই রাজাও নেই, আর সেই রাজত্বও নেই, কিন্তু, রাজার দেওয়া সেই রাজহাঁসের বংশধরের দল, আজও সুইস লেকে তাদের রাজত্ব করে চলেছে। আর, টুরিস্টদের দৌলতে ওদের খাওয়া দাওয়ার তো কোন অসুবিধাই হয় না।
আল্পসের প্রেক্ষাপটে লেক লুসার্নের অপূর্ব সৌন্দর্য গত কয়েকশো বছর ধরে কতো যে কবি, সাহিত্যিক, সুরকার, শিল্পী, চিত্রকরের প্রেরণা ছিল তার কোন হিসেব নেই। চারদিক দিয়ে আল্পসের পাহাড়শ্রেণী ও ছবির মতো সুন্দর শহর দিয়ে ঘেরা এই লেক শুধু যে নিজস্ব সৌন্দর্য দিয়েই সুইস দৃশ্যকে সম্পূর্ণ করে, মনোরম করে, তা নয়, সামারে যখন আল্পসের বরফ গলে যায়, এই লেকই সুইজারল্যান্ডের নানা অঞ্চলের নদী গুলোর জল নিয়ন্ত্রণ করে – তাই উনিশ শতাব্দীতেই ইঞ্জিনিয়ারিং দক্ষতায় এই সুইস শহরের লেকে বিস্তৃত ড্যাম গড়ে উঠেছে। এই ব্যবস্থা সুইজারল্যান্ডের ছোটো ছোটো গ্রাম ও শহর গুলোকে বন্যা থেকে রক্ষা করে, সুইস জীবন যাপনকে সহজ করে।
সন্ধ্যার রং আরও গাঢ় ধূসর হয়, বাতাসের সেই শিরশিরে ঠাণ্ডা যেন আরও জমাট বাঁধে, রাস্তায় লোকজনের চলাফেরা কমে যেতে শুরু করে। জীবনে তো কতো সন্ধ্যাই আসে, একটা সন্ধ্যা না হয় একটু অন্যরকম হয়েই স্মৃতিতে একটু জায়গা করে নিক – তা সে একটা ধূসর সুইস সন্ধ্যাই হোক।
দারুন লেখা….Photography is awesome… Double Thumps up….
অনেক ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা জানাই।