সুখের খোঁজে (Happy)

Abak Prithibi

‘সুখ’ নামক এক তিরতিরে মিষ্টি অনুভূতির খোঁজে ‘Happy’ সিনেমার পরিচালক Louisiana  র জলাভূমি থেকে শুরু করে কোলকাতার বস্তির মানুষদের জীবন যাপনেও উঁকি দিয়েছেন – সুখের খোঁজে পৃথিবীর পঞ্চাশটা দেশ পাড়ি দিয়ে তিনি জানতে চেয়েছেন কিসে মানুষ সুখী হয়? মানুষ কি চায়? টাকা? অর্থ? মান? যশ? পতিপত্তি? ক্ষমতা? মানুষের এই বিশেষ অনুভূতি মাপার সত্যিই কি কোন মাপকাঠি আছে?

বিজ্ঞান তাতেও এগিয়ে গিয়ে মানুষের সুখের পরিমাণ মাপতে চেয়েছে – হ্যাপিনেস ইনডেক্স দিয়ে মানুষের সুখের মাত্রা বোঝার চেষ্টা করেছে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে মানুষের ‘সুখ’ নামক অনুভূতিটি টাকার সঙ্গে সমানুপাতিক – কিন্তু, যখন এক বিশেষ পরিমানের টাকা, মানুষের যাবতীয় পার্থিব প্রয়োজন মিটিয়ে দিতে পারে, তখন সুখ আর টাকার সঙ্গে সমানুপাতিক হয় না। দেখা গেছে, টাকা বেড়ে গেলেও সুখের পরিমাণ একই জায়গায় থাকে।

আমেরিকার মানুষদের গত পঞ্চাশ বছরে প্রচুর আর্থিক উন্নতি হয়েছে, সমগ্র আমেরিকারই প্রচুর অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে – কিন্তু, সমীক্ষায় দেখা গেছে, আমেরিকার মানুষের সুখের গ্রাফ একই জায়গায় আছে – পঞ্চাশ বছর আগে যা ছিল এখনো তাই আছে। পঞ্চাশ বছর আগে আমেরিকার মানুষ যে পরিমাণ সুখী ছিল, আজকের আমেরিকার মানুষও সেই পরিমাণ সুখী।

আসলে সুখের খোঁজে, মানুষ এক সময়ে নিজেকে এক hedonic treadmill এ দাঁড় করিয়ে দেয় – যেখানে মানুষ একান্ত ভাবে কোন এক জিনিস চায়, ও কিনে নেয় বা পেয়ে যায়। কিছুদিন সেই কেনা কিংবা পাওয়ার আনন্দে সুখী থাকে,  তারপরেই আরেক নতুন চাহিদা তৈরি করে নেয়, আবার পাওয়া, আবার নতুন চাহিদা – সেই চাওয়া-পাওয়ার চক্রে বারবার মনে হয়, ঐ জিনিসটি পেয়ে গেলেই বোধহয় সম্পূর্ণ সুখী হওয়া যায়। কিন্তু, বাস্তবে দেখা যায় আরও আরও চাহিদা তৈরি হয়ে গেছে, এক অসুখী, উৎকণ্ঠার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। জীবনের তাই নিয়ম, এগিয়ে যাওয়ার জন্যে, উন্নতির জন্যে চাহিদার প্রয়োজন, কিন্তু, সেই একের পর এক পার্থিব চাহিদা মানুষকে ইঁদুর দৌড়ে এগিয়ে দিতে পারে, কিন্তু কখনোই সম্পূর্ণ সুখী করতে পারে না।

সেই অদ্ভুত সাইকেল মানুষকে সুখ প্রাপ্তির এক গন্ত্যব্যে পৌঁছে দিয়েই আরেক গন্ত্যবের জন্যে তৈরি করে। আর তাই, এই hedonic adaptation মানুষকে কখনোই সুখী করে না, বরং সুখের চরম শত্রু হয়ে দাঁড়ায়। তাই মনে হয় জীবনের, এক সময়ে ঐ বিষাক্ত বৃত্ত থেকে একটু সরে দাঁড়াতে হয়।

তাহলে সুখ কার বন্ধু? মানুষ কিসে সুখী? দুই ধরণের মানুষ – এক যারা অর্থকেই প্রথম প্রাধান্য দেয়, আরেক ধরণের মানুষ যারা নিজস্ব সৃষ্টিশীলতা, সম্পর্ক, দয়া, মানবতাকে প্রাধান্য দেয়, পৃথিবীকে ভালো রাখতে চায় – তাদের উপরে সমীক্ষায় দেখা গেছে দ্বিতীয় ধরণের মানুষ অপেক্ষাকৃত বেশী সুখী।

বিজ্ঞানের জগতের বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব আইনস্টাইনও তাই বিশ্বাস করতেন – সৃষ্টিশীলতাই মানুষকে সম্পূর্ণ সুখী করতে পারে। সেই সময় আইনস্টাইন থিয়োরি অফ রিলেটিভিটি নিয়ে কাজ করছিলেন – তাঁর সেই কাজ তাঁকে এতোই মগ্ন রাখত, যে প্রায়ই তিনি খাবার খেতে ভুলে যেতেন। কাজ শেষ হওয়ার দুই দিন পরে, আইনস্টাইন তাঁর ছেলেকে লিখেছিলেন – নিজেকে সুখী দেখতে হলে নিজেকে সৃষ্টিশীলতার মধ্যে হারিয়ে ফেলতে হয়, ডুবিয়ে দিতে হয়।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, একটা বয়সের পরে সুখ টাকা পয়সার হাত ছেড়ে দিয়ে সৃষ্টিশীলতার সঙ্গে বন্ধুত্ব করে নেয়। সুখ আসলে কোন এক গন্ত্যব্য নয় – সুখ এক জীবন যাপনের নাম, অভ্যাসের নাম, এক পথের নাম, এক ক্ষণস্থায়ী অনুভূতির নাম।

ক্লান্ত দিনের শেষে প্রিয়জনকে দেখে এক মুখ হাসির নাম সুখ, কৌতুক বোধের নাম সুখ। জীবনের ছোট ছোট জিনিসে আনন্দ খুঁজে নেওয়ার নাম সুখ। নিজেকে জানার নাম সুখ, স্বপ্ন দেখার নাম সুখ। ভালোবাসার নাম সুখ। প্রতিশ্রুতির নাম সুখ। অচেনা মানুষকে একটু সাহায্যের নাম সুখ। বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে ফিরে এসে এককাপ গরম চায়ে চুমুক দেওয়ার নাম সুখ। সুখ জড়িয়ে আছে জীবনের প্রতিটি বাঁকে, প্রতিটি মোড়ে – শুধু তাকে একটু খুঁজে নিতে হয়।

জীবনে যেমন প্রচুর কারণ থাকে অসুখী হওয়ার, তেমনি তার শতগুণ কারণ থাকে সুখী হওয়ার – শুধু মানুষ কাকে বেছে নিয়ে জীবনে এগিয়ে যাবে, কাকে খুঁজে নেবে তা মানুষই ঠিক করে নেয়।

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Inspirational and tagged , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান