সমুদ্র শহর মালাগায় এসে একবার সমুদ্র তীরে আসবো না, সে তো হয় না। তবে, মালাগা শহর কেন্দ্র থেকে সমুদ্র তীরটি একটু দূরে, বাস নিতে হয়, বাস থেকে নেমে, Pablo Ruiz Picasso প্রমেনাদ ধরে একটু হেঁটে, সামনেই দেখা যায় সমুদ্র তীরের সারি বাঁধা খেজুর গাছের মাথা, এমনকি এখানের হাওয়াও সমুদ্রের উপস্থিতি জানান দেয়।
মালাগা শহরের অনেক জায়গাতেই খেজুর গাছের দেখা পেয়েছি – এমনকি, এখানে দেখি সমুদ্র তীরের দীর্ঘ প্রমেনাদের দু’পাশে খেজুর গাছ লাগানো। বলা যায়, এই শহরের সবুজ সৌন্দর্যের সমস্ত দায় যেন খেজুর গাছদের।
জুনের গরম দিনে মালাগার সমুদ্র তীরে যেন আনন্দের হাট বসেছে, সমস্ত মালাগার টুরিস্ট ও স্থানীয় মানুষ যেন এখানেই এসে জড়ো হয়েছে। সমুদ্র তীরের পাশে দীর্ঘ প্রমেনাদ – পাথরে বাঁধানো, প্রচুর রেস্টুরেন্ট, প্রচুর মানুষের সমুদ্র স্নান, খেলা, মেডিটেরিয়ান খাওয়া দাওয়া, সাঁতার কাটা – সব মিলিয়ে যেন এক যজ্ঞ বসেছে।
সারি বাঁধা রেস্টুরেন্টের বাইরে আবার বড় বড় নৌকোর উপরে কয়লার আগুনে তাজা সার্ডিন মাছ রোস্ট হচ্ছে, কাছেই জেলেদের জালে ধরা পড়ছে প্রচুর সার্ডিন – রোস্টেড সার্ডিনের মাতাল গন্ধেই খিদে পেয়ে যায়। যে কোন খোলা রেস্টুরেন্টে বসে রোস্ট সার্ডিন অর্ডার দিয়ে মালাগুয়েটা বীচে মানুষের আনন্দে মেতে ওঠা দেখাও যে মালাগা দর্শনেরই অঙ্গ।
খাওয়া শেষে সমুদ্র তীরের দীর্ঘ প্রমেনাদ ধরে হাঁটতে হাঁটতে নানা ধরণের মানুষ, তাঁদের কল কাকলি শুনতে শুনতে কোস্টা দে সল ও তার এই শহরের মানুষের উষ্ণতাকে অনুভব করা যায়। তবে স্পেন তো, সমুদ্র তীরেও ছিঁচকে চোরদের হতে সাবধান হতে হয়। বরং প্রচুর মানুষের ভিড়ে ছিঁচকে চোরদের তৎপরতা আরও বেড়ে যায়, শুনেছি আনন্দে মেতে ওঠা মানুষের অবহেলার সুযোগ নিয়ে দামী জিনিস, মোবাইল, ক্যামেরা ইত্যাদি চুরি যেতেই পারে।
যাইহোক, জুনের গরমে দীর্ঘ প্রমেনাদ ধরে হাঁটার জন্যেও দেখি চমৎকার ব্যবস্থা, রাস্তার উপরে সাদা শামিয়ানা টাঙ্গানো, আর মাঝে মাঝেই উপরের পাইপ থেকে ঠাণ্ডা জল স্প্রে হচ্ছে – তাই রাস্তাটায় বেশ এক ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ভাব। ভাবলাম – এই জিনিসটি দেশে নিয়ে গেলে বেশ হয়।
এখানে প্রচুর বীচের আবার নানান নাম, প্রতিটি বীচই খুবই পরিছন্ন। মানুষের তৈরি বীচ La Malagueta য় বাচ্চাদের জন্যে নানা ধরণের খেলা ধূলার ব্যবস্থা, গরমের সময় ইউরোপের সমুদ্র তীর কখনোই খালি থাকে না, তাও আবার স্পেনের কোস্টা দে সলের বীচ! বালুকাময় সমুদ্র তীরে গা এলিয়ে বসে ছুটি কাটানো ওদের অন্যতম বিনোদন – সম্পূর্ণ এক সৈকত জীবন আর কি!
তবে, কিছুক্ষণ আগের এক দমকা কুয়াশা যেন অনেকেরই আনন্দে জল ঢেলেছে – অনেকেই দেখি ফেরার পথ ধরেছে। আর, আমরা দীর্ঘ প্রমেনাদ ধরে হাঁটতে হাঁটতে মালাগার মালাগুয়েটা বীচের আনন্দ যজ্ঞের সাক্ষী হয়ে রই।