কুড়ির দশকের শুরুর দিকে জার্মানির উপর থেকে এয়ার ক্র্যাফট তৈরির নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে দেওয়া হল – BMW তখন গাড়ি তৈরির বাজারে ঢুকে পড়েছে। আবার BMW এয়ার ক্র্যাফট এঞ্জিন তৈরি শুরু করল, কিন্তু BMW মোটর সাইকেল তৈরিও ভুলল না।
এদিকে তখন জার্মানিতে হিটলার উঠে আসছে, হিটলারের নাৎসি যুগ শুরু হচ্ছে। BMW তখন ব্রিটিশ অস্টিন কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা ছিন্ন করে নিজেদের তৈরি নক্সায় কার তৈরির দিকে মন দিল। ও নাৎসি যুগের প্রথমের বাজারে এলো BMW 303 – প্রথম BMW six-cylinder ইঞ্জিন কার। কিন্তু, হিটলার BMW এর গাড়ির চেয়েও বেশী আগ্রহী ছিল BMW এর তৈরি এয়ার ক্র্যাফটের প্রতি। তাই হিটলারের পুরোপুরি সাহায্য পাওয়ার জন্যে BMW আবার শক্তিশালী এয়ার ক্র্যাফট তৈরির দিকে মন দিল। মিউনিখে তৈরি হতো BMW এর এয়ার ক্র্যাফট। সেই সময় মাত্র দুই বছরে মিউনিখে BMWর এয়ার ক্র্যাফট তৈরির ফ্যাক্টরিতে কর্মী সংখ্যা ২৮০০ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছিল সাড়ে বারো হাজারে!
আবার সেই সময় BMW গাড়িও সমান তালে তৈরি হয়ে চলেছে – বাজারে চলে এসেছে BMW স্পোর্টস কার 315। সেই সময় পারিবারিক, স্পোর্টস ও লাক্সারি কারের দুনিয়ায় BMW কারের ডিজাইন, স্টাইল, গতি, একে একে সবার মন জয় করে ফেলে। ত্রিশের দশকের শেষের দিকে তৈরি হয় BMW 326, এর ক্লাসিক ডিজাইন, গতি, বিলাসিতা, ইঞ্জিন মানুষকে মোহিত করে দেয় – কয়েক বছরেই প্রচুর BMW 326 গাড়ি বিক্রি হয়ে যায়।
এদিকে হিটলারের বাহিনীকে BMW যুগিয়ে চলেছে এয়ার ক্র্যাফট, এমনকি সেই সময় BMW এয়ার ক্র্যাফট তৈরির সাফল্যকে নিজেদের গাড়ির বিজ্ঞাপন হিসাবেও ব্যবহার করতো। যে কিনা হিটলারের জন্যে এতো ভালো এয়ার ক্র্যাফট তৈরি করে – সে গাড়িও ভালো বানায়। ত্রিশ থেকে চল্লিশের দশকে নানা নক্সার BMW গাড়ি দেখা গিয়েছিল – এবং সব খুবই সফল ছিল। অবশ্য BMW র আকাশ ছোঁয়া সাফল্যের কারণও ছিল – প্রতিটি BMW গাড়ির নক্সা ছিল একদম আলাদা, প্রযুক্তি গত ভাবে খুবই উন্নত।
তারপর বাজারে সম্পূর্ণ নতুন নক্সা নিয়ে BMW 327, BMW 328 আসে। সেই সময় নাৎসি জার্মান জীবন যাপনের অঙ্গই ছিল BMW গাড়ি।
এমনকি, তখন একদিকে BMW যেমন জার্মান জাতিকে এক একটি নতুন ধরণের গাড়ি দিয়ে মন ভোলাচ্ছে, সেই সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছে যুদ্ধের নানান সরঞ্জাম, এয়ার ক্র্যাফট তৈরির কাজ। ত্রিশের দশকের শেষ দিকে হিটলারের নানা ধরণের প্রচুর মিলিটারি প্রোজেক্টে BMW কাজ করে চলেছিল। হিটলারের অধীনের জার্মানির এই কোম্পানি তখনই উন্নত প্রযুক্তির রকেট ইঞ্জিন, জেট ইঞ্জিন তৈরি করছিল। কিন্তু, সেই সঙ্গে গাড়ি তৈরির কাজ কিন্তু থামায় নি। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের ঠিক আগেই বাজারে আসে BMW 335। এবং BMW 335 মডেলটি নাৎসি মিলিটারি অফিসারদের অতি প্রিয় হয়ে দাঁড়ায়।
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ ঘোষণা হওয়ার পরেই BMW যুদ্ধের জন্যে পুরো দমে প্রচুর গাড়ি ও এয়ার ক্র্যাফট তৈরি করতে শুরু করে দেয়। BMW ফ্যাক্টরির কর্মী সংখ্যা প্রচণ্ড ভাবে বেড়ে যায় – জার্মান জেলের যুদ্ধ বন্দী ও হিটলারের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের বন্দীদের BMW ফ্যাক্টরির কাজে নামানো হল। সেই সময় জার্মান নাৎসি বাহিনীর সমস্ত এয়ার ক্রাফট, পাওয়ার ফাইটারের ইঞ্জিন BMW ই তৈরি করেছিল।
যুদ্ধের বাজারে BMW র এই সাফল্য মিত্র শক্তির নজর কেড়ে নিল, যুদ্ধের সময় মিউনিখের BMW ফ্যাক্টরিতে চব্বিশ ঘণ্টা বোমা পড়তে শুরু হল, মিউনিখের এই একটাই BMW ফ্যাক্টরির উপরে ১৯৪৪ এর জুলাইয়ের এক দিনে প্রায় বারো হাজার বোমা পড়ে – ধূলিসাৎ হয়ে যায় BMW ফ্যাক্টরি।
যুদ্ধের পরে BMW ফ্যাক্টরিকে আবার নতুন করে শুরু করতে হয়। শুরু হয় BMW মোটর সাইকেল থেকে – রাস্তায় নামে R24, এবং যথারীতি দীর্ঘ রাস্তায় ও প্রতিযোগিতায় আবার BMW এগিয়ে যায়। কিন্তু, যুদ্ধের মারাত্মক ক্ষয় ক্ষতির পরে শুরুর গল্পটা খুব একটা সহজ ছিল না। কিন্তু, BMW জানে কি ভাবে যুদ্ধের ক্ষত ভুলে এগিয়ে যেতে হয় – আর সেই এগিয়ে যাওয়ার গল্পের নিদর্শনের সামনে দাঁড়িয়ে আজ পৃথিবীর মানুষ অবাক হয়।
পিংব্যাকঃ একটি গাড়ির গল্প – এক (BMW Museum, Munich, Germany ) | অবাক পৃথিবী (Abak-Prithibi)