লিসবন শহর কেন্দ্রে (Rossio Square, Lisbon, Portugal )

মধ্য যুগ থেকে লিসবনের বিখ্যাত ও প্রধান প্রাণচঞ্চল স্কোয়ার এই Rossio Square।   ভাবা যায়, মধ্য যুগে এই স্কোয়ারে ফাঁসি বা মৃত্যুদন্ড থেকে শুরু করে উৎসব, বুল ফাইট সবই সম্পন্ন হতো? আজ এই শান্ত অথচ প্রাণচঞ্চল এই স্কোয়ার লিসবন বাসী ও টুরিস্টদের এক অন্যতম প্রিয় জায়গা। চারিদিকে দোকান, কাফ্যেটারিয়া, রেস্টুরেন্টের সারি – লিসবনে থাকা কালীন, এখানে এসে রেস্টুরেন্টে খেতে খেতে ও নতুন মানুষ দেখতে দেখতে সময় যে কি ভাবে পার হয়ে যায় বোঝাই যায় না।

লিসবনের মানুষ আবার খুব মাছ ভাজা খায়, তাই এই স্কোয়ারের পাশের রেস্টুরেন্ট গুলোর পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মাছ ভাজার ভুরভুরে গন্ধে বাঙালির খিদে পাবেই। যে কোন এক রেস্টুরেন্টে ঢুকে ফিশ ফ্রাই অর্ডার দিয়ে শুধু চমকের অপেক্ষা। পাঁচ রকমের বেশ বড় আকারের মাছ বিশাল প্লেটে সাজিয়ে নিয়ে আসে বেয়ারা, সঙ্গে পর্তুগীজ ব্রেড ও স্যুপ – দেখে প্রশ্ন জাগবেই এতো খেতে পারবো তো? পর্তুগীজরা ফ্রেঞ্চদের মতো অল্প খাদ্য কায়দা করে পরিবেশন করতে জানে না। পর্তুগীজদের খাবার পরিবেশনের মধ্যে বেশ এক প্রাচুর্য ভাব আছে।

যাইহোক, উদর পূর্তি সেরে স্কোয়ারে উদ্দ্যেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়ানো ও মানুষ দেখাই যেন এই পর্তুগীজ সন্ধ্যের উদ্দ্যেশ্য, মাঝ জুলাইয়ে এখানে রাতের অন্ধকার নামে বহু দেরীতে।

পর্তুগালের রাজা Pedro IV কে সম্মান জানিয়ে বর্তমানে এই স্কোয়ারের নামকরণ হয়েছে Pedro IV স্কোয়ার। স্কোয়ারের মাঝ বরাবর Pedro IV এর মূর্তি সহ এক স্তম্ভ আকাশের দিকে হাত বাড়িয়েছে। অন্য দিকে আছে ব্রঞ্জের তৈরি ফোয়ারা, থিয়েটার ও পর্তুগীজ স্থাপত্য। স্কোয়ারের শেষে আছে Rossio রেল ষ্টেশন, কারুকার্যে ভরা সুন্দর এই রেল স্টেশনটিও এক ঐতিহাসিক স্থাপত্যের নিদর্শন ও টুরিস্ট গন্ত্যব্য।

এই স্কোয়ার তেরো ও চোদ্দ শতাব্দী থেকেই লিসবনের জন সাধারণের কাছে খুবই গুরুত্ব পেয়ে এসেছে। আঠারো শতাব্দীতে লিসবনে এক ভয়ানক ভূমিকম্প হয় ও পর্তুগালের জনজীবন মারাত্মক ভাবে ক্ষতি গ্রস্ত হয়। পর্তুগালের ইতিহাসে তাই বার বার সেই ভয়ানক ভূমিকম্পের উল্লেখ পাওয়া যায়। পর্তুগীজ ইতিহাসকে সেই ভূমিকম্প দুই পর্যায়ে ভাগ করেছে – ভূমিকম্পের আগে ও পরে। পৃথিবীর অন্যতম ভয়ানক ভূমিকম্প হিসাবে গন্য হয় লিসবনের সেই ভূমিকম্প। বহু স্থাপত্য ধসে যায়, এই স্কোয়ারের আশেপাশের প্রচুর স্থাপত্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে সমস্ত স্থাপত্য আবার তৈরি হয়।

এখন এই স্কোয়ারের চারপাশের স্থাপত্য মধ্যযুগীয় ইতিহাসের নিদর্শন বহন করলেও আধুনিক পর্তুগীজ জনজীবনের কোলাহলে পরিপূর্ণ এই স্কোয়ার। তাই বিদেশী টুরিস্টদের পর্তুগীজ জন জীবনের ছোঁয়াচ পেতে, পর্তুগীজ সংস্কৃতির আঁচ পেতে এক বার অন্তত এই স্কোয়ারে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়ানোই উচিত।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Portugal, Travel and tagged , , , , , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s