ডিসেম্বরের কণকণে ঠাণ্ডায় ও বৃষ্টিতে তুলুস তখন জবুথবু। ক্রিসমাসের ছুটি পড়তে কয়েকদিন বাকি, ছুটির কড়কড়ে আনন্দে ভেজা ভেজা ভাব কার ভালো লাগে? ঠিক করলাম হোক বৃষ্টি, যতই জাঁকিয়ে ঠাণ্ডা পরুক না কেন আসে পাশে কোথাও যেতেই হবে।
দক্ষিণ ফ্রান্সের তুলুসে এসে মিদি পাইরেনিস পাহাড় শ্রেণীর অস্তিত্ব কিছুতেই অস্বীকার করা যায় না। তুলুস শহর ছাড়িয়ে কিছুদূর গেলেই মিদি পাইরেনিস পাহাড়ের কোলে ফ্রেঞ্চ জীবন যাপনের সুন্দর ছবি দেখা যায়। তাই, মিদিপাইরেনিস পাহাড় শ্রেণীকে একদম ওপর থেকে দেখতে সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে 2877 মিটার উচ্চতায় মিদিপাইরেনিস চূড়ায় অবস্থিত অবজারভেটরি Pic du Midi de Bigorre যাওয়াই ঠিক করলাম। ১৮৮০ তে তৈরি এই Pic du Midi de Bigorre অবজারভেটরির বারান্দা থেকে পাইরেনিসের অপূর্ব শ্বাস রুদ্ধকর সুন্দর পাহাড় শ্রেণীই যে দেখা যায় তা নয়, আকাশ পরিষ্কার থাকলে কিংবা এই উঁচুতে মেঘের উপরে রাতের আকাশের তারাদের নীচে, রাতের আকাশ পর্যবেক্ষণেরও সুবিধা আছে। গরমের সময়ে তাই প্রায়ই সাধারণ মানুষের জন্যে রাতের আকাশ পর্যবেক্ষণ করার নানান আয়োজন চলে।
আঁধার ভোরে তুলুস থেকে ট্রেনে পৌঁছে গেলাম Tarbes, এখান থেকে আবার বাস নিয়ে Pic du Midi de Bigorre এর পাদ দেশে La Mongie বলে আরেক স্কি ষ্টেশনে পৌঁছে গেলাম। ডিসেম্বরের এই সময়ে সারা রাস্তা তুষারাবৃত, সকাল সূর্যের চমৎকার আলোয় সারা রাস্তা, পাশের পাহাড়ের ও জঙ্গলের গায়ে জমে থাকা তুষার ঝকঝকে আলো বিচ্ছুরণ করে, চোখ ধাঁধায়। তাই অতি সন্তর্পণে ফ্রেঞ্চ বাসচালক বাস চালিয়ে পৌঁছে দিল La Mongie, শীতের বেলা ছোট ও এই সময়ে বাসের সংখ্যা বেশ কমে যায় তাই খুব তাড়াতাড়িই Pic du Midi থেকে নেমে আসতে হবে বলে বাসচালক আমাদের সতর্ক করে দিল। La Mongieথেকে Pic du Midi পৌঁছনোর দুই উপায় আছে – গরম কালে ট্র্যাকিং করে ও শীতকালে কেবল কারে। শীতকালে ট্র্যাকিং রুট বন্ধ থাকে। যাইহোক, প্রচুর লোক স্কি এর জন্যে জমা হয়েছে এখানে, শীতকালের সমস্ত উইন্টার গেমস এখানে মজুত।
উপরে পৌঁছে দেখি নীল দিগন্তে বিস্তৃত সাদা পাহাড়ের ঢেউ যেন থমকে আছে কোন এক যাদু বলে। দক্ষিণ পশ্চিম ফ্রান্সের এই তুষারাবৃত বিস্তীর্ণ মিদিপাইরেনিস পাহাড় শ্রেণী দেখে, নব কুমারের মত বলতে ইচ্ছে হল – আহা, কি দেখিলাম, জন্ম জন্মান্তরেও ভুলিব না।