প্যারিসে যতবারই যাই না কেন প্যারিসের এক নতুন দিক, নতুন জায়গা চোখে পরে। একবারে প্যারিসকে যেন পুরোপুরি দেখে শেষ করে ওঠা যায় না। বিশাল প্যারিসের নানান কোণ অজানাই থেকে যায়। সেবার গরমের সময় যখন প্যারিসে বেশ কিছুদিন থাকতে হয়েছিল প্যারিসের অন্য দিক আবিষ্কারের নেশায় প্রায়ই বেড়িয়ে পড়তাম। প্যারিসের নানান বাগানের বড় বড় গাছের পাতায় সবে লাল রঙ ধরতে শুরু হয়েছে, দিনের রঙ উজ্জ্বল, আকাশ ঘন নীল – এই সময় প্যারিসের প্রান চঞ্চল রূপের টানে প্রচুর টুরিস্ট প্যারিসে হানা দেয়।
এই সময় প্যারিসের নানান বাগানে প্রচুর ফুল চারিদিক আলো করে রেখেছে, যেন এক উৎসবের আলোড়ন লেগেছে বাগানে ফুলেদের মধ্যে। সিয়েন নদীর বাঁ দিকে প্যারিসের 5ème arrondissement এ 28 hectares জমির উপরে প্যারিসের Jardin des Plantes বা প্যারিসের বোটানিক্যাল গার্ডেন। এই বিশাল গার্ডেনের নানান ফুলের বাহার দেখতে দেখতে সারাটা দিন কোন দিকে যে বয়ে যায় বোঝাই যায় না। শুধু কি বাগান, এখানে চার ধরণের মিউজিয়াম গ্যালারি আছে -Galerie de l’Évolution, the Mineralogy Museum, the Paleontology Museum ও the EntomologyMuseum। তাছাড়া অতি পুরনো দিনের এক ছোট্ট চিড়িয়াখানাও আছে।
1626 এ স্থাপিত এই গার্ডেন প্রথম দিকে শুধুই ভেষজ গাছের বাগান ছিল, নাম ছিল Jardin du Roi মানে রাজার বাগান। আজ এই বাগান সাধারণ মানুষের মনোরঞ্জনের সঙ্গে সঙ্গে ফ্রান্সের প্রচুর বোটানিস্ট, হরটিকালচারিস্ট তৈরি করে এসেছে ও করে চলেছে। পৃথিবীর নানা জায়গার নানান প্রজাতির গাছ গাছড়া এই বাগানে সযত্নে জায়গা পেয়েছে, এমনকি যে সব গাছের ফ্রান্সের আবহাওয়া সহ্য হয় না তাদের জন্যেও কাঁচ ঘরের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। আর সেই কাঁচ ঘরের সৌন্দর্য ফ্রেঞ্চদের সৌন্দর্য প্রীতির নিদর্শন বহন করছে।
শহরের মধ্যে এক সুন্দর সবুজ পরিবেশ তৈরি করা, তাকে কয়েকশো বছর ধরে সযত্নে প্রতিপালন করা, তাঁকে ঘিরে এক পড়াশোনার পরিবেশ তৈরি করা , নিজের সবুজ সম্পদ রক্ষা করা ও অর্থ উৎপাদন করা – এই সবই কত সুন্দর, সহজ, ছন্দোবদ্ধ, সাবলীল এখানে। জানি না শহরের এই সবুজ অংশ সুন্দর রাখা ও পরিচর্যা ঘিরে এখানে কোন রাজনৈতিক দলের দলাদলি কাজ করে কিনা।