পেস্টের গল্পকথা (BudaPest, Hungary)

ইউরোপের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় ‘হলকস্ট’। হাঙ্গেরির বুদাপেস্ট এখনো যেন সেই কালো অধ্যায় ভুলতে পারে নি। হলকস্ট মিউজিয়াম যেন সেই অধ্যায় মনে করায়। the Great Synagogue এর সামনে দাঁড়িয়ে সে কথাই মনে হয়। হলকস্টে মৃত ইহুদিদের কবর, Holocaust Memorial, Raul Wallenberg Memorial Park যেন এক দমকায় ইতিহাসের পাতা পালটে দেয়। Raul Wallenberg ছিলেন এক সুইডিশ ডিপ্লোমেট, তিনি হলকস্টের সময় হাজার ইহুদিদের প্রান বাঁচানোর জন্যে সুইডিশ এম্বাসির হয়ে Protective Passports বানিয়েছিলেনএই জায়গা জার্মানদের স্তাবেল ও রেডিও যোগাযোগের আস্থানা ছিল।

দানিয়ুব নদীর পাথরে বাঁধানো তীরে অতিব সুন্দর, কারুকার্যময় পার্লামেন্ট হাউসের নীচে ষাট জোড়া লোহার জুতোর সারি দেখে বুক খাঁ খাঁ করে ওঠে, ব্যাথায় মুচড়ে ওঠে মন। চলার পথে একটু থেমে সেই ষাট জোড়া অপেক্ষারত জুতো দেখে মনে হয় এখুনি যেন ওরা জুতো খুলে কোথাও গেছে। এখুনি ওরা ফিরে আসবে। কোন কোন জুতোর সামনে কিছু বাসি শুকনো ফুল, কম্পমান মোমবাতির শিখা জানিয়ে দেয় আজও বুদাপেস্টের মানুষ সেই অনামি ষাট জনের বলিদানকে ভোলে নি।

ইতিহাসের অনেক বেদনা দায়ক ঘটনার সাক্ষী এই দানিয়ুব নদী, অতীতের অসংখ্য নিরীহ জিউস মানুষের হাহাকার শুনেও নীরবে দানিয়ুব বয়ে চলেছিল, আজও বয়হলকস্টের ভিক্টিমদের মেমোরিয়াল এই ষাট জোড়া জুতো। মানুষের হিংস্রতার কথা বারবার মনে করাতেই যেন এই মেমোরিয়াল।

এই ষাট জোড়া জুতো হলকস্টের স্মৃতি জাগ্রত করে। বুদাপেস্টের নিরীহ ইহুদিদের এখানে গুলি করা হয়েছিল ও ১৯৪৪ থেকে ১৯৪৫ এর মধ্যেশীতের সকালে দানিয়ুবের তীরে শরীরের সমস্ত জামা কাপড় খুলিয়ে লাইন করে দাড় করিয়ে গুলি করা হয়েছিল। গুলি করার আগে জুতো খোলার নির্দেশ দিয়েছিল নাজিরা, কারণ চামড়ার জুতো তখন খুব দামী জিনিষ ছিল। সেই সময়ে কারাগারের ইহুদি বন্দিদের প্রায়ই দানিয়ুবের তীরে দাড় করিয়ে গুলি করা হত, আর তাঁদের মৃতদেহ দানিয়ুবের স্রোতে ভেসে যেতRaul Wallenberg অনেক ইহুদিদের সেই মারাত্মক, ভয়াভহ ভাগ্যের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন। তাই বুদাপেস্ট আজও তাঁকে স্মরণ করে।

চেন ব্রিজ থেকে দানিয়ুবের দু’ পাশে বুদাপেস্টের বিস্তার দেখতে দেখতে প্রচুর মানুষ হেঁটে চলেছে, কেউ চলেছে নিত্য দিনের কাজে, কেউ বা শুধুই টুরিস্ট – আমাদের মতোই দেখতে এসেছে হাঙ্গেরির ইতিহাস, স্থ্যাপত্য, জনজীবন, মানুষ। ট্যুরিজম ইউরোপের এক শিল্প, কি ভাবে টুরিস্টদের সর্বোত্তম তথ্য সরবরাহ করা যায় তা নিয়ে যেন নিত্য নতুন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এরা। বিদেশ থেকে বেড়াতে এসে কেউ যাতে ওদের দেশকে নিন্দা করে তা নিয়ে যেন ওরা খুবই সচেতন। পেস্টের রাস্তার মোড়ে মোড়ে দেখি অল্প বয়সী ছেলে মেয়েরা ‘i’ছাপ টিশার্ট পড়ে টুরিস্টদের সাহায্য করে যাচ্ছে।

কয়েক বছর আগে বুদাপেস্টের অনেক রাস্তার নতুন নামকরণ হয়েছে, এবং এখনো অনেক রাস্তার নতুন নামকরণ হয়ে চলেছে। তাই পুরনো ম্যাপ বই, বা গাইড বই দেখে অনেকেই শহরের অলি গলি হারিয়ে ফেলে। তাই ঐ চলমান ইনফরমেশন সত্যি খুবই সাহায্য করেছে আমাদের।

পূর্ব ইউরোপের এক রাজধানী শহর, কত ইতিহাস তার অঙ্গে অঙ্গে জড়ানো, অদ্ভুত তার স্থাপত্য, তাকে ঘিরে লক্ষ মানুষের বাঁচা, স্বপ্ন দেখা – এই শহরের অতীত ও বর্তমান মানুষের বেঁচে থাকার অনুভূতি কিছু মনে আর কিছু ক্যামেরায় বন্দী করে ফিরে আসার দিন হয়।

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Hungary. Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান