জীবনটা মনে হয় সার্কাসের এরেনায় খেলা দেখানো। হাজার চোখের সামনে অতি সন্তর্পণে মনোযোগ সহকারে দড়ি ধরে উপরে উঠে গিয়ে দুলতে থাকা, যে কোন মুহূর্তে পড়ে যাওয়ার ভয় কাটিয়ে উপরেই খেলা দেখানোর নামই যে সার্কাস তথা জীবন। খেলা দেখানোর জন্যে পাদপ্রদীপের আলোর আড়ালে সাধারণ মানুষের যে পরিশ্রম, অধ্যবসায়, মনোযোগ সে আমরা ভুলেই যাই। শুধু ঐ টুকু সময়ের খেলা দেখে মুগ্ধ আমরা। জীবনেও তাই। পৃথিবী যে ‘ফল’ দেখে, ‘কর্ম’ দেখে না।
শীত এখানে যেমন জড়, তেমনি শীতের জড়তা কাটিয়ে ওঠার নানান ব্যবস্থা। ডিসেম্বরের হাড় কনকনে ঠাণ্ডায় তুলুসে সার্কাসের আসর ‘Cirque de noel’ বসে। তুলুসবাসি তখন সার্কাসের তাঁবুতে বিনোদন খুঁজে নেয়, ভিড় জমায়। শহরকেন্দ্র থেকে একটু দূরে Zenith এর বিশাল চত্বরে প্রতি শীতেই সার্কাসের দল তাঁবু গাড়ে। বাঘ, হাতি, ঘোড়া, কুকুর, পায়রা, জোকার, ট্রাপিজের খেলোয়াড় – ওদের সবার বিশাল ক্যারাভান জায়গা দখল করে নেয়। এই সময়ে পরিবেশটায় কেমন যেন এক ভবঘুরে ভাব দানা বাধে।
কারাভান নিয়ে ইউরোপের নানান জায়গায় জায়গায় খেলা দেখানো ওদের পেশা। এক বন্ধু বলল – এ কেমন পেশা? কোথাও শিকড় ছড়ানো নেই, শুধুই ঘুরে বেড়ানো। আমি বললাম – ভাবতে পারো যে লোকটি বাঘের মুখে চুমু খায় সে কোনোদিন বাঘটিকে ছেড়ে থাকতে পারবে? কিংবা যে লোকটি সাদা পায়রার খেলা দেখায় সে পায়রাদের খেলা দেখানো ছেড়ে কোন এক কোম্পানিতে চাকরি করছে? এদের মুখ দেখে মনে হয় এরা এদের পেশার প্রেমে পড়ে গেছে।
সার্কাসের পশু গুলোকে দেখে মনে হল ওরা বেশ সুখেই আছে। বাঘ শুধু সশরীরে এরেনায় আসা মাত্র হাততালিতে তাঁবু ফেটে পড়ল। ভারতবর্ষের সার্কাসের মতো আগুনের রিং দিয়ে ঝাঁপ দেওয়া নেই, কোন কঠিন খেলা দেখানো নেই, রিং মাস্টারের চাবুকের আঘাত নেই – এখানে ওদের কাজ অনেক কম। শুধু রিং মাস্টারের মুখে একটু চুমু খেতে হয় – তাতেই প্রচুর হাততালি পড়ে। পশুদের মধ্যে দেখলাম ঘোড়া আর হাতিরা একটু বেশী কাজ করেছে। তিনটে হাতি মঞ্চে এসে সুর দুলিয়ে দাঁড়াতেই দর্শক আনন্দে আত্মহারা। এখানের সার্কাসে পশুদের কাজ সত্যি অনেক কম। হাতিরা দর্শকের মধ্যে থেকে যে কোন বাচ্চাকে শুঁড়ে নিয়ে ঘুরেছে। যে বাচ্চাটি হাতির শুড়ে চেপে ঘুরেছে – আনন্দে বোধহয় তার রাতের ঘুম উবে যাবে। ঘোড়া বাজনার তালে তালে মাথা দুলিয়ে নেচেছে। এতেই দর্শক খুশি।
এখানের সার্কাসে মানুষরাই বেশী খেলা দেখায়। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ইউরোপের নানান জায়গার মানুষ নানান খেলা দেখিয়ে জমজমাট করে তুলেছে শীতের সন্ধ্যাকে।
আজকের টিভি, সিনেমার যুগে বহু প্রাচীন এই বিনোদন যেন এক ছুটে ছেলেবেলায় নিয়ে গেল – শহরে সার্কাস এসেছে বহুদিন ধরে, একদিন দেখতে যাব – সেই অপেক্ষার কথা মনে এলো। বিনোদনের মাধ্যমে নিজেদের পারিপার্শ্বিক প্রাণীদের প্রতি চেতনা বোধ জাগ্রত বোধহয় সার্কাসের মাধ্যমেই হয়।
ipad, facebook, TV, etc. chere eto lok ei thanday circus dekhte eseche dekhe khub bhalo ………… Poshimbonge circus to pray uthei gache …… ajker Digital prithibi-te Circus-r moto binodon kromosho kon-thasha hochhe ……………..
haan, thik i bolechen…ei binodon dekhchi Europe khub bhalo bhabe jibito rakhar chesta korche…