সাহাকারি স্পাইস গার্ডেন – গোয়া

গোয়ায় এসে, সমুদ্রের বালি, ঢেউ ও নোনা জলের নেশা যখন একটু একটু কেটে ওঠে, গোয়াকে তখন অন্যরকম ভাবে আবিষ্কার করতে ইচ্ছে জাগে। গোয়ায় কি শুধুই সমুদ্র দেখবো – অবশ্যই না, গোয়ার যে অন্যরকম এক চেহারা আছে – সাহকারি মশলা গার্ডেনে এসে জানতে পারলাম।

সাহকারি গার্ডেনের টিকিটের সঙ্গেই খাবারের ব্যবস্থা থাকে – আনলিমিটেড ভেজ, ননভেজ ব্যুফে – সে এক এলাহি ব্যপার।

যাইহোক, গার্ডেনের সদর গেটেই হলুদ ফুল ও সবুজ চা দিয়ে স্বাগত জানানো হল। পুরো গার্ডেন দেখিয়ে দেওয়ার জন্যে এক এক দলের জন্যে গাইডের ব্যবস্থা আছে।

গাইড, সে উড়িষ্যা থেকে এসেছে- প্রায় দশ বছর হয়ে গেছে, এখনো সে গোয়ার মুগ্ধতার আবেশটুকু কাটিয়ে উঠতে পারেনি – গোয়াকে সে ভালবেসে ফেলেছে – গোটা জীবন এখানে কাটিয়ে দিতে রাজী। গোয়ার হাওয়া, পরিবেশ, উদারতা, সভ্যতা – সবই তাকে মুগ্ধ করেছে।

মুখে এক মৃদু হাসি, মস্তিষ্কে মশলা সম্বন্ধে জ্ঞানের এক উইকিপিডিয়া নিয়ে জঙ্গলের ভেতরের সরু রাস্তা ধরে এগিয়ে চলল। পথে যত ধরনের গাছ দেখা যাচ্ছে – ক্রমাগত সে তার  সমস্ত জ্ঞানের ভাণ্ডার উজার করে দিতে শুরু করল।   

সাধারনত যে মশলা গুলোকে শুকনো অবস্থাতেই দেখে এসেছি – সে যে কোন এক গাছ থেকে এসেছে, সেই কথাটাই ভুলে যাই – সেই সমস্ত শুকনো মশলার গাছের উপস্থিতি এই গার্ডেনে।

সে কোকো গাছের অদ্ভুত ফুল থেকে শুরু করে কোকো ফল হোক বা এলাচি, দারচিনি, লবঙ্গ, গোলমরিচ গাছ হোক  – প্রায় সব ধরণের মশলা গাছই এই গার্ডেনে দেখা যায়।

গোলমরিচের লতানো গাছ, দৃঢ় সুপুরি গাছের গা বেয়ে উঠে আলোর উদ্দেশ্যে হাত বাড়িয়েছে।

প্রায় পঁয়ত্রিশ একর জমির উপরে ছড়িয়ে আছে এই মশলা বাগান।

জঙ্গলের উঁচুনিচু, আলো ছায়ার  পথ ধরে অনেকক্ষণ হাঁটতে হাঁটতে যখন একটু একটু করে জল তেষ্টা ও খিদে পেতে শুরু করল – গাইড জানালো – অতঃপর আমাদের যাত্রা এখানেই শেষ হল। এবার দুপুরের খাবার পালা।

ফিরে এলাম এক ছাউনির নিচে। গাইড প্রথমেই ঘাড়ের কাছে শার্টের ফাঁকে এক হাতা ঠাণ্ডা জল ঢেলে দিল – বলল – এতটা হেঁটে এসেছেন স্পাইস ওয়াটার দিলাম, শরীর জুরিয়ে যাবে।

সত্যি, শিরদাঁড়া বেয়ে ঠাণ্ডা জলের স্রোত যেন সারা শরীর এক নিমেষে জুড়িয়ে দিল।

এবার গাইড বলল – লাঞ্চ শুরুর আগে আমি এখানের এক স্থানীয় পানীয় দিতে চাই, এক চুমুকেই খেয়ে নিতে হবে। পানীয়টি কাজুর ফলের রস থেকে তৈরি হয়, এখানে পানীয়টিকে ফেনী বলে – মরশুমে খুবই পাওয়া যায় – স্থানীয়রা বলে এই পানীয় খুবই স্বাস্থ্যকর – বিশেষ করে হজমের জন্যে খুবই ভালো।

অগত্যা সবাই এক চুমুক করে ফেনী খেয়ে, লাঞ্চের ব্যুফের দিকে পা বাড়ালাম। প্রচুর খাওদাওয়ার ব্যবস্থা – স্থানীয় মাছ ভাজা থেকে শুরু  করে সবই সাজিয়ে রাখা – ইচ্ছে মতো খাওয়া যায়। লাঞ্চ সেরে, মশলা কিনে এবার ফেরার পালা – এক অন্য রকম গোয়ার চেহারা দেখে ফিরলাম। চারিদিকে নগরায়নের মাঝে এক টুকরো সবুজ বুকে নিয়ে বাঁচা – ওয়েসিস ছাড়া আর কি!          

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Uncategorized. Bookmark the permalink.

1 Response to সাহাকারি স্পাইস গার্ডেন – গোয়া

  1. অজানা's avatar অজ্ঞাত বলেছেন:

    জানলাম নতুন জিনিস । আরও এধরনের লেখা পড়তে চাই । গাছগুলোর ছবি থাকলে ভাল হতো ।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান