দিউ – কল্পনার এক স্বপ্ন (Diu – A dream of your imagination, India)

দিউ ট্যুরিজমের একটা বিজ্ঞাপন দেখে শুরু করেছিলাম দিউ ভ্রমণের এক সুপ্ত পরিকল্পনা, সেটা মনের গহনে গভীর ভাবে সুপ্তই ছিল, কারণ সাধারণত বিজ্ঞাপন তো অনেকটা ঠিক মরিচিকার মতো, কাছে গিয়ে হয়তো দেখা যাবে কিছুই নেই। কিন্তু, সেই সুপ্ত বাসনা বা পরিকল্পনায় হঠাৎই ইন্ধন পেল, চলে এলো দিউ ভ্রমণের এক সুবর্ণ সুযোগ। ব্যস, আর কি, মন বৈরাগী ব্যাগ গুছিয়ে পাড়ি দিল দিউয়ের পথে।

চারিদিক থেকে গুজরাট রাজ্য দিয়ে ঘেরা দিউ, তাই স্থল পথে দিউ যেতে হলে গুজরাটের উপর দিয়েই যেতে হয়, তাছাড়া, দিউয়ের এক ছোট্ট এয়ারপোর্ট আছে, শুধু মুম্বাই থেকেই প্লেন যায়। যদিও গুজরাটের উপর দিয়েই আমাদের যাত্রা, সেই স্থল পথের বর্ণনা নাই বা করলাম – আহমেদাবাদ ছাড়িয়ে কিছু দূর যদি ভালো রাস্তা হয়, তো আরও কিছু দূর গিয়ে গ্রামের দিকে খোঁদল ভরা পথের ঝাঁকুনিতে প্রান ওষ্ঠাগত হতে পারে – অবশ্য পথ মেরামতের কাজ অতি দ্রুত গতিতেই এগিয়ে চলেছে। তবে দিউ যাওয়ার রাস্তা যাই হোক না কেন – দিউ কিন্তু আন্তর্জাতিক মানের রাস্তা ঘাট, পরিছন্নতা, পরিষেবা নিয়ে টুরিস্টদের জন্যে অপেক্ষা করে।

সাতচল্লিশে দেশ স্বাধীন হয়ে যাওয়ার পরেও কিন্তু পর্তুগীজরা এক দশকের উপরে এখানে রয়ে গিয়েছিল – তারই ছাপ এখনো যেন রয়ে গেছে দিউয়ের আনাচে কানাচে। সমুদ্রের তীরে এই দ্বীপের বাসিন্দাদের অনেকের কাছে এখনো পর্তুগীজ পাসপোর্ট রয়ে গেছে, এখনো অনেক বয়স্করা এখানে পর্তুগীজ ভাষায় কথা বলতে পারে।

স্থানীয় লোকেরা বলে, পর্তুগীজ জলদস্যুরা নাকি এক কালে প্রচুর সোনাদানা, হিরে জহরত, মোহর ইত্যাদি এই দিউয়ের জমিতে পুতে রেখেছিল – পর্তুগীজরা দিউ ছেড়ে যাওয়ার পরে অনেকেই নাকি সেই ধনরত্ন পেয়ে বড়লোক হয়ে গিয়েছিল। সেই গল্প শুনে, এখনো এখানে অনেকে মাটি খোদাই করে সেই গুপ্তধনের খোঁজ করে।

অদ্ভুত এই জায়গা – ওয়াইন, পেট্রোল, ডিজেল ট্যাক্স ফ্রি – অন্য জায়গার চেয়ে অনেক সস্তা। এখানে নাকি ক্রাইম রেট জিরো – অন্তত দমন দিউ পুলিশের তাই ধারণা – তার নমুনা অবশ্য দেখেছি, রাতে দিউয়ের সমস্ত সৈকতে টুরিস্টের অবাধ ঘোরাফেরা, সশস্ত্র পুলিশের পাহারা সেই কথাকেই প্রমান করে। দিউয়ে হোটেল ও ট্যুরিজম ছাড়া আর অন্য কোন ইন্ডাস্ট্রি নেই, তাই পরিবেশ দূষণও শূন্য।

প্রচুর হকা (Hoka Trees) গাছের সারি দিয়ে সাজানো পরিচ্ছন্ন রাস্তা ঘাট – এই হকা গাছ আসলে আফ্রিকার বাসিন্দা, পর্তুগীজদের সঙ্গে ওরাও এসেছিল দিউয়ের মাটিতে, পর্তুগীজরা ফিরে গেলেও হকা গাছ রয়ে গেছে দিউয়ের মাটিতে – দেখি রাস্তার পাশে স্থানীয়রা এই হকা গাছের লাল ফল বিক্রি করেছে, অনেক ফল তো এমনিতেই গাছের নীচেই পড়ে আছে।

একদিকে নির্জন সমুদ্র সৈকতে সূর্যোদয়, পর্তুগীজ দুর্গের ওপাশে সূর্যাস্ত, নির্জনতা, খাওয়াদাওয়া – মোটকথা সব মিলিয়ে প্রকৃতির এক অনন্য নির্জনতার সম্ভার এই দিউ ও তার সোনালি সৈকত – এখানে এসে যেন ব্যস্ত ঘড়ির কাঁটা থেমে যায়। তাই দিউকে দেখে সত্যি মনে হয় কল্পনায় দেখা সেই স্বপ্নের বাস্তব রূপ।

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Diu, India, Travel and tagged , , , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান