একদম শুরুর দিকে তুলুসে, প্রতিদিন ঘরে ফেরার সময় যখন বাসটি এক বিশাল গোল চক্করকে ঘিরে, এক পাক নিয়ে অন্য এক রাস্তায় গিয়ে পড়ত, ঐ সময়ে প্রতিদিনই ভাবতাম এই গোল চক্করে একবার আসতে হবে।
তুলুস কেন্দ্রের বিশাল এই গোল চক্কর শুধু যে সাধারণ এক গোলচক্কর তা নয়, এক বিশাল আকারের গোল বাগানই বলা যায় – প্রায় দুশো মিটার ব্যসের এই গোল চক্করটিকে ঘিরে, চারদিকে চারটে বড় রাস্তা শহরের নানা দিকে চলে গেছে, আর মাঝে এক সুন্দর ফোয়ারা, ফোয়ারা ঘিরে আবার সুন্দর মরশুমি ফুলের বাগান, বসার জায়গা, সুন্দর gazebo , ঘাসে ঢাকা ছোট্ট মাঠ, ঘাস পরিপাটি করে ছাঁটা – সব মিলিয়ে জায়গাটি যেন রীতিমত হাতছানি দিত – একবার তো এখানে আসতে হয়ই।
তাই, একটু সময় পেয়েই ছুটে যেতেই হলো তুলুস কেন্দ্রের বিশাল এই গোল বাগানে – নাম তার, Le Grand Rond , তারপর তো সময় পেলেই বছরের নানা সময়ে, বহুবার ঐ গোল বাগানের রং বদলে সামিল হয়েছি, দেখেছি ঐ জায়গার নানা রূপ।
আঠারো শতাব্দীর মাঝামঝি সময়ে তৈরি এই গোল চক্কর বা গোল বাগানটি প্রায় চার হেক্টর জমির উপরে ছিল, তাই, উনিশ শতাব্দীতে এই এলাকাকে এক ইংলিশ ল্যান্ডস্কেপ গার্ডেনে পরিণত করা হয়।
তুলুস কেন্দ্রের এই গোল গার্ডেনটি রয়্যাল গার্ডেনের সমসাময়িকই বলা যায়, এবং পাশাপাশি অবস্থান করে – আর এই দুই গার্ডেনকে জুড়েছে লোহার তৈরি এক সুন্দর সেতু। সেই সেতু ধরে হাঁটতে হাঁটতে তুলুসের সমস্ত ট্র্যাফিক এড়িয়ে রয়্যাল গার্ডেনে চলে যাওয়া যায়।
সামারে এই গোল বাগানে কোন না কোন ছোটখাটো উৎসব, বা প্রদর্শনী লেগেই থাকে। তখন, প্রচুর মরশুমি রঙিন ফুল জায়গাটাকে একদম আলো করে রাখে। কিন্তু, শীতে যেন গোল বাগান, অনেকটাই স্তব্ধ হয়ে যায়, ফোয়ারা আর জল উগরায় না, মানুষের আসা যাওয়াও কমে যায়, বাগানের মাটি গুলোও কেমন নিঃস্ব, খালি হয়ে যায়, গাছের হলদে পাতা ঝরে গিয়ে এক রিক্ত ছবি ফুটিয়ে তোলে, কখনো তীব্র শীতে ফোয়ারার নীচের জল জমে বরফ যায়, ঝুরো মাটির ফাঁকে ফাঁকে তুষার কুচিরা আটকে থাকে – গোল বাগানে প্রকৃতি যেন সামারের জন্যে অধীর এক অপেক্ষায় থাকে।