রেল ষ্টেশন যখন মিউজিয়াম ( Musée d’Orsay, Paris, France)

বিংশ শতাব্দীর শুরুর প্রথম বিশ্ব প্রদর্শনীর জন্যে প্যারিসের কাছে পৃথিবীর মানুষের জন্যে অন্য আরও যাই চমক থাকুক না কেন,  ‘Gare d’Orsay’ রেল ষ্টেশন যা পরবর্তী কালে ‘মিউজে দে ওরসে’ হয়ে গেল, সে, কিন্তু সত্যিকারেই এক বিশেষ চমক ছিল।

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময়ে এই রেল ষ্টেশন রীতিমত ব্যস্ত এক মেলিং সেন্টার হিসাবে কাজ করেছিল। পুরনো দিনে যখন রেলের দৈর্ঘ ছোট হোতো, ওরসে রেল ষ্টেশনে ট্রেন থামত, কিন্তু, তারপর তো আধুনিক যুগে রেলের দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়ার পরে ওরসে রেল ষ্টেশন বেশ ছোট হয়ে পড়ল, তাই, ওরসে রেল ষ্টেশনটি বেশ কিছুদিন পরিত্যক্তই ছিল।

সত্তরের দশকে এই রেল ষ্টেশনটি ভেঙ্গে দিয়ে সেই জায়গায় এক হোটেল তৈরির প্রস্তাব ছিল, কিন্তু, প্রাচীন কালের এক পরিত্যক্ত রেল ষ্টেশনকে যে রাতারাতি এক শিল্প কলার মিউজিয়ামে রুপান্তরিত করে দেওয়া যেতে পারে, তা তখন হয়তো অনেকেই ভাবতে পারে নি।

তা ছাড়া, ফরাসী আধুনিক যুগের শিল্পীদের আঁকা চিত্র, শিল্প রাখার জন্যে তো ল্যুভরে মিউজিয়ামে জায়গা ছিল না! ল্যুভরে মিউজিয়ামের শিল্প সংগ্রহ উনিশ শতাব্দীর আগে এসেই থমকে গেছে, আর Modern Art এর জন্যে, তখন মিউজিয়াম তৈরি শুরু হয়ে গিয়েছিল ‘ Georges Pompidou Centre’।

কিন্তু, ল্যুভরের প্রাচীন শিল্প ও  Georges Pompidou Centre এর মর্ডান আর্টের মধ্যে যে বিরাট এক ব্যবধানে, ফরাসী শিল্পের ইতিহাসে, ফরাসী ইমপ্রেশনিস্টদের যে এক বিশাল অবদান ছিল, তার জন্যে তো এক বিশেষ জায়গা চাই, তখন দেখা গেল, ফরাসী ইমপ্রেশনিস্ট শিল্পীদের সৃষ্টি সুরক্ষিত ভাবে সংরক্ষিত করার জন্যে প্যারিসের কেন্দ্রে, ওরসে রেলস্টেশনের চেয়ে ভালো জায়গা, সুন্দর জায়গা তো আর হতে পারত না – তাই, পরিত্যক্ত রেল ষ্টেশন হয়ে গেল, আর্ট মিউজিয়াম।

প্যারিসের হৃদয় কেন্দ্রে, এই ওরসে মিউজিয়াম আধুনিক ফরাসী ইমপ্রেশনিস্টদের এক মিলন কেন্দ্র হিসাবেও ধরা হয়, এই মিউজিয়ামের সংগ্রহ গুলো যেন ফরাসী শিল্পের ইতিহাসকে জুড়ে দিয়েছে, ফরাসী শিল্প ইতিহাসের এক ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে।

উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকের প্রায় সমস্ত ফরাসী শিল্পীর সৃষ্টি এই মিউজিয়ামে নিজস্ব জায়গা করে নিয়েছে – এখানে শুধু যে তেল রঙের ছবি স্থান পেয়েছে তা নয়, ভাস্কর্য ও পুরনো দিনের ফটোগ্রাফ ও এখানে জায়গা পেয়েছে। ফরাসী ইমপ্রেশনিস্টদের মধ্যে কে নেই এখানে, ভ্যন গঘ থেকে শুরু করে Claude Monet, রেঁনোয়া সহ সমস্ত ফরাসী শিল্পীর দেখা, এখানেই পাওয়া যায়। তাই, ছুটির দুপুরে, ফরাসী শিল্পীদের সৃষ্টি ভালো ভাবে দেখার জন্যে, বিশাল এই মউজিয়ামে অনেক সময় হাতে নিয়েই আসতে হয়।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, France, Travel, Western-Europe and tagged , , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s