সুইজারল্যান্ড মানেই তো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্বর্গ ভূমি, আর সেই স্বর্গ ভুমির রানী যখন রিগি পাহাড়, সুইজারল্যান্ডে এসে তাঁকে তো একবার ছুঁয়ে যেতেই হয়, তাছাড়া, সুইস ট্রেনের পাসের দৌলতে দেশটির আদ্যপান্ত দেখে নেওয়ার সুযোগ কোনরকমেই হাতছাড়া হতে দিতে দিতে চাই নি, তাই, শেষ দুপুরের দিকে ট্রেনে চেপে বসলাম।
দিগন্ত বিস্তৃত ঢালু সবুজ মাঠে হলুদ ঘাস ফুলের হাতছানি, সাজানো ছোট্ট ছোট্ট কাঠের বাড়ী, নিশ্চিন্ত সুইস গরুর কচি কচি ঘাস চিবোনোর আরাম, তাদের গলায় বাঁধা ঘণ্টি দোলানোর সুরেলা রিনিরিনি আওয়াজ, প্রেক্ষাপটে তুষার ধবল সুইস আল্পসের গম্ভীর উপস্থিতি – সব মিলিয়ে সত্যিই রিগি পাহাড়ের অঞ্চলকে সুইস আল্পসের রানী বলা যায়।
ট্রেনে, জানালার পাশে বসে অপূর্ব সুইস সৌন্দর্যের সাক্ষী হতে হতে কখন যে Arth-Goldau এর রিগি ষ্টেশন চলে এলো বোঝাই গেল না – এখানে নেমে একটু হেঁটে Arth-Rigi Bahn থেকে রিগি পাহাড়ের চূড়ায় যাওয়ার ট্রেন নিতে হয় – এখান থেকে শুরু হয় পাহাড়ে চড়ার জন্যে বিশেষ ধরণের cogwheel রেলপথ, ইউরোপের প্রথম cogwheel রেলপথ।
সুইস পাহাড়ের রানী, রিগির পথে অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য চারিদিক থেকে ঘিরে রাখে, এখানে হঠাৎ আকাশে মেঘ জমে রিগি পাহাড়কে ঢেকে দিলেও যেন রিগির অন্য সৌন্দর্য ধরা দেয়।
সুইজারল্যান্ডের চারিদিকে এতোই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, যে এখানে মানুষের মনে বোধহয় মনখারাপের মেঘ কখনোই জমে না – তাই, বোধহয় বিশ্বের হ্যাপিনেস ইনডেক্সে সুইজারল্যান্ড প্রথম সারিতে রাজত্ব করে। হয়তো, এখানের মানুষ প্রকৃতিকে আঁকড়ে ধরে, প্রকৃতির সৌন্দর্যকে সম্বল করে, ব্যবসা করে বাঁচে বলেই এদের মনে সুখ বিরাজ করে – কে জানে। সুইজারল্যান্ডে গিয়ে তো, মনে হয়, সুইস সুখের গোপন রহস্য হয়তো সুইস পাহাড়ে, সুইস প্রকৃতির কোলেই লুকনো আছে।
যাইহোক, ফেব্রুয়ারির শেষ বিকেলে রিগি পাহাড়ের কোলে খুব তাড়াতাড়িই সন্ধ্যা নামে – কোন পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই রিগির কোলে ঝুপ করে যেন সন্ধ্যা নেমে পড়ল – ঘন নীল এক সন্ধ্যা, সঙ্গে নিয়ে এলো একরাশ হিমেল হাওয়া। সেদিন আমরা, রানী রিগি পাহাড়ের গায়ে হিমেল হাওয়ায় নীল সন্ধ্যা নামার সাক্ষী হয়ে ছিলাম।
হিমেল হাওয়ায় রিগি পাহাড়ের সেই সন্ধ্যাকে বরণ করে ফেরার পথ ধরি, সেই পাহাড়ি হিমেল সন্ধ্যা আমাদের জীবন স্মৃতির এক দুর্লভ ছবি হয়ে রয়ে যায়। আর, সেই হিমেল রিগি সন্ধ্যার সুইস সুখের অনুভূতি আমাদেরও একটু যেন ছুঁয়ে যায়।