আশ্চর্য অর্কিড (The Orchid)

উজ্জ্বল, নানা রঙের আশ্চর্য, অদ্ভুত সুন্দর বন্য, জঙ্গুলে ফুল – অর্কিডকে ঘিরে বহু প্রাচীন কাল থেকেই রহস্য দানা বেঁধেছে। শতাব্দী ধরে অর্কিড সংগ্রহ ইউরোপের কারোর কাছে শখ, ঘর সাজানোর উপকরণ, কারোর কাছে আভিজাত্যের প্রতীক, কারোর কাছে গবেষণার বিষয়, কারোর কাছে ব্যবসা, আবার কারো কারোর কাছে অর্কিড সংগ্রহ পাগলামির শেষ পর্যায় – কেউ কেউ একটি বিরল প্রজাতির অর্কিডের খোঁজে হাজার মাইল পাড়ি দিতে পারে, কেউ দিতে পারে যে কোন মূল্য।

যেমন, বেলজিয়ামের প্ল্যান্ট কালেক্টর ঘোস্ট অর্কিডকে প্রথম কিউবার জঙ্গলে আবিষ্কার করেছিলেন। আর, সেই অর্কিড নেশায় মাতোয়ারা লোকেরা মিলে অর্কিড সোসাইটি, বা ক্লাব তৈরি করে – যেখানে শুধু অর্কিড নিয়েই চর্চা হয়, ইংল্যান্ডে অর্কিডের প্রচুর শো, প্রদর্শনী হয়, অর্কিড মেলা হয়। আর সেখানে বিভিন্ন প্রকারের অর্কিডের বিভিন্ন রকমের আকর্ষণ, বিভিন্ন রকমের আবেদন।

সাধারণত গ্রীষ্ম প্রধান দেশে নানা ধরণের অর্কিডের দেখা পাওয়া যায় ও পৃথিবীতে প্রাকৃতিক উপায়ে প্রায় কুড়ি হাজার অর্কিডের দেখা পাওয়া যায়, কিন্তু, উনিশ শতাব্দীতে ইউরোপের বাজারে অর্কিডের অনুপ্রবেশ ঘটার পরে ও জঙ্গুলে অর্কিডকে চাষ করার পদ্ধতি জানার পরে, অর্কিডের সৌন্দর্যে  মুগ্ধ অর্কিড প্রেমী হর্টিকালচারিস্টরা প্রায় একলক্ষ প্রজাতির অর্কিড তৈরি করেছে। আর সেই লক্ষ প্রজাতির অর্কিড তার সৌন্দর্য, অপূর্ব রং বা অদ্ভুত সুবাস দিয়ে মানুষকে আকর্ষণ করেছে, মুগ্ধ করেছে। তাই, বর্তমানে অর্কিডকে নার্সারির পরিবেশে চাষ করার নিত্য নতুন বিভিন্ন পদ্ধতি তৈরি হয়ে চলেছে।

বহু প্রাচীন কাল থেকেই ভারতবর্ষ ও চীনে অর্কিড ওষুধ হিসাবে ব্যবহার হয়ে এসেছে, এমনকি, বর্তমানে ভ্যানিলা যার সুবাস কেক ও আইসক্রিমের দৌলতে আমাদের অতি পরিচিত, তা কিন্তু, এক প্রকার অর্কিডের বিচি।

আবার কোন কোন অর্কিডের তীব্র মাতাল করা সুগন্ধও আছে, তাই পারফিউম ইন্ডাস্ট্রিতেও অর্কিড প্রচুর ব্যবহার হয় – তাই এক দিক দিয়ে দেখতে গেলে আশ্চর্য সুন্দর ঐ ফুলগুলোর অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। তাছাড়া, মানুষ তো যখনই যা কিছু সুন্দর দেখে, তা দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করতে চায় – তাই অর্কিডের এতো সমাদর।

অর্কিড সাধারণত জঙ্গলে পরগাছা হিসাবে অন্য গাছের উপরে বসবাস করে, জঙ্গল আলো করে ফুটে থাকা নানা রঙের নানা আকারের ঐ জঙ্গুলে ফুলটির এতো তীব্র আকর্ষণ যে, দিব্যি ইউরোপের মানুষের বসার ঘরে জায়গা করে নিয়েছে। এমনকি, বাংলা সাহিত্যেও সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের তৈরি গোয়েন্দা চরিত্র কর্নেলেরও নেশা – নানা প্রজাতির অর্কিড সংগ্রহ।

যদিও ইউরোপের জীবন যাপনে, অদেখা, অধরা, রহস্যময় অর্কিডের অনুপ্রবেশ উনিশ শতাব্দীর প্রথম দিকে, কিন্তু, প্রায় দু’ কোটি বছর আগের এক মৌমাছির ফসিলে বিশেষ প্রজাতির অর্কিডের রেনু পাওয়া গিয়েছিল, যা প্রমাণ করে প্রাগৈতিহাসিক সময়েও পৃথিবীতে অর্কিড ছিল।

সেই সময়ে মৌমাছিরাই অর্কিড ফুলের রেনু বহন করে অর্কিডের বংশ বৃদ্ধি করাতো। এমনকি, অর্কিডের জিন প্রমান করেছে, যে পৃথিবীতে অর্কিড আরও আরও আগেও ছিল, এমনকি ডাইনোসর যুগেও অর্কিড ছিল। ভাবা যায়, আজ বসার ঘরে অন্দরসজ্জার অঙ্গ হয়েছে যে ফুলটি, তা একসময়ে ডাইনোসর যে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতো, সেই প্রাগৈতিহাসিক জঙ্গলে, জঙ্গল আলো করে ফুটে থাকতো?

যাইহোক, আজ অর্কিড এক দামী পণ্য, বহু দেশের নানা ধরণের ঔষধে ব্যবহার হয়। আবার অপূর্ব এই ফুলের বিভিন্ন প্রজাতি, বিভিন্ন দেশে, জাতীয় ফুল হিসাবে সম্মান পায়। বোধহয়, পৃথিবীতে অন্য কোন ফুলের এতো ধরণের প্রজাতি, এতো রকমের রং, আকার, এমন অপরূপ সৌন্দর্য হয় না। তাই তো, মানুষ এখানে ঐ ছোট্ট ফুলের মোহে সম্মোহিত, মাতোয়ারা, পাগলপারা।

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, France, Travel, Western-Europe and tagged , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান