ভিলিনুসের ক্যাথিড্রাল স্কোয়ারে (Cathedral Square, Vilnius, Lithuania)

যদিও ভিলিনুসের ঐতিহাসিক যাত্রা বহুকালের, কিন্তু, এই শহরের খোলা জায়গা ক্যাথিড্রাল স্কোয়ারটি বয়সে অনেক নবীন – উনিশ শতকের তৈরি এই ক্যাথিড্রাল স্কোয়ারের সৌন্দর্য ইউরোপের অন্যান্য জায়গার থেকে কোন অংশেই কম নয়। অনেকটা পিসার হেলানো টাওয়ারের মতো দেখতে – অন্তত দূর থেকে তো তাই মনে হয়, বেল টাওয়ারটি এই ক্যাথিড্রালের সৌন্দর্যে আরেক মাত্রা যোগ করেছে।

ভিলিনুসের ক্যাথিড্রাল স্কোয়ারের মূল আকর্ষণ তেরো শতাব্দীর নিও ক্লাসিক্যাল ক্যাথিড্রাল ও বেল টাওয়ার। তেরো শতাব্দীর তৈরি মূল ক্যাথিড্রালের ধ্বংসাবশেষকে সংস্কার করে এর উপরেই তৈরি হয়েছে এই রোমান ক্যাথোলিক ক্যাথিড্রাল। সংস্কারের সময় প্রাচীন ক্যাথিড্রালের ভেতরের দেওয়ালে চোদ্দ শতাব্দীর প্রাচীন ফ্রেস্কো আবিষ্কার হয়েছিল – লিথুনিয়ার সবচেয়ে পুরনো ফ্রেস্কো বলা হয়। এখনো ভেতরে ষোল থেকে উনিশ শতাব্দীতে আঁকা ছবি ও ফ্রেস্কো দেখা যায় – তাই এই ক্যাথিড্রালকে সরকারী ভাবে The Gallery of Images বলেই সম্বোধন করা হয়।

লিথুনিয়ায় সোভিয়েত শাসনের প্রথম দিকে এই ক্যাথিড্রালকে গুদাম ঘর হিসাবে ব্যবহার হত – শুধু এই ক্যাথিড্রালই নয়, উত্তর ইউরোপের যে দেশ গুলো সোভিয়েত শাসনের অন্তর্গত ছিল – প্রায় সমস্ত বড় ক্যাথিড্রাল সোভিয়েত সেনাদের নানা কাজে ব্যবহার হয়েছিল, হয় ক্যাথিড্রাল গুলো বার-রেস্টুরেন্টে পরিণত হয়েছিল বা গুদাম ঘরে।

যাইহোক, রবিবারের ভর দুপুরের অদ্ভুত নির্জনতা গায়ে জড়িয়ে নিয়ে ধবধবে সাদা নিও ক্লাসিক্যাল ভিলিনুস ক্যাথিড্রাল, সাদা বেল টাওয়ার, ঘন নীল আকাশ – সব মিলিয়ে যেন স্কোয়ারটি এক সুন্দর দৃশ্য তৈরি করেছে – এখানে দাঁড়িয়ে পাহাড়ের উপরের Gediminas’ Tower  ও তার উপরে ভিলিনুসের পতাকা দেখা যায়।

যেহেতু, শহরের মধ্যের এক বিশাল খোলা জায়গা – তাই, মিলিটারি প্যারাড থেকে শুরু করে ক্রিসমাস মেলা, শহরের নানান উৎসব অনুষ্ঠান, গান বাজনার আসর, ভিলিনুসের মানুষের মেলামেশা সব কিছুরই ঠিকানা এই ক্যাথিড্রাল স্কোয়ার। তাছাড়া, এই অপূর্ব স্কোয়ার লিথুনিয়ার এক প্রতীকও বটে।

এখানের নির্জনতায় যেন রবিবারের দুপুরের সময় থমকে দাঁড়ায়। অনন্ত কাল ধরে কতো মানুষের আসা যাওয়া দেখছে এই স্কোয়ার, কতো মানুষের পদ চারণে অনুরণিত হয়েছে এই চত্বর, এই দেশের কতো পালা বদল, দিন বদল দেখেছে এই ক্যাথিড্রাল স্কোয়ার, কতো ইতিহাসের সাক্ষী – আর উত্তর ইউরোপের প্রান্তে এই শহরের সেই স্কোয়ারে দাঁড়িয়ে, মাথা উঁচু করে বেল টাওয়ারের উচ্চতাকে দেখতে দেখতে, রোমান ক্যাথিড্রালের চূড়ায় নানান স্ট্যাচুর অপূর্ব ভঙ্গি দেখতে দেখতে অবাক হওয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় আছে কি? এখানে এসেছিলাম, দেখেছিলাম, এই অচিন দেশের হাওয়ায় নিঃশ্বাস নিয়েছিলাম – আমাকে সেই সত্যই অভিভূত করে, ভাবুক করে, জীবনকে আরও ভালবাসতে শেখায়।

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Lithuania, Northern-Europe, Travel and tagged , , , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান