জাগ্রেবের রাজকীয় সেনাদল (The Changing of the guards, Zagreb, Croatia )

পুরুষদের ফ্যাশনের এক গুরুত্বপূর্ণ আনুষঙ্গিক – ‘নেক টাই’ নাকি ক্রোয়েশিয়ার Cravats রয়্যাল রেজিমেন্টের সেনাদের জমকালো পোশাক থেকে ধার করা হয়েছে। ফ্রেঞ্চে তো নেক টাইকে সরাসরি Cravate ই বলে। ক্রয়েশিয়ান রয়্যাল আর্মির পোশাকে এক লাল স্কার্ফ সুন্দর করে গলায় জড়িয়ে থাকে। সেই স্কার্ফে সুন্দর এক নট বাঁধা থাকে, পুরুষের পোশাকে এক নতুন মাত্রা দেয় এই গলায় জড়ানো স্কার্ফ। ব্যস, সারা পৃথিবীর পুরুষ-ফ্যাশন দুনিয়া ঐ ছোট্ট স্কার্ফের মোহে পড়ে গেল, পুরুষরা টাইয়ের ফাঁসে জড়িয়ে গেলো!

সতেরো শতকে ক্রয়েশিয়ান The Royal Cravats আর্মি ফ্রেঞ্চ রয়্যাল আর্মির সঙ্গে যোগ দেয়, আর সেই ঐতিহাসিক সন্ধিকে সম্মান জানাতে বর্তমানে প্রতি শনি রবিবারের দুপুরে, মানে দুপুর বারোটা বাজার কুড়ি মিনিট আগে থেকে শুরু করে, জাগ্রেব শহরের নানান ঐতিহাসিক স্থান গুলোতে সাদা লাল কালো পোশাকের রয়্যাল আর্মির প্যারেড হয়, চলে দুপুর দুটো পর্যন্ত।

সকাল থেকে জাগ্রেব আবিষ্কারে হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত হয়ে শহর কেন্দ্রের এক রেস্টুরেন্টে বসে খেয়ে বিশ্রাম নিতে নিতে শুনি ড্রাম, বাজনার আওয়াজ। তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে একদম Royal Cravats আর্মির মুখোমুখি। ঘোড়ায় চড়া সেনা চলেছে আগে – গায়ে বুটি বুটি ছাপের ঘোড়া, কালো ঘোড়ারা বেশ নিশ্চিন্ত মনেই দুলকি চালে হাঁটছে। বেশ এক রাজকীয় ব্যপার। পেছনে অনুসরন করছে বাজনা বাদক, পতাকাধারী সাদা লাল কালো জমকালো পোশাকধারী গম্ভীর সেনারা। আর! পেছনে প্রচুর টুরিস্ট ক্যামেরা নিয়ে সঙ্গে আসছে। গলি পথ ছাড়িয়ে সেনারা বাজনা বাজিয়ে এগিয়ে চলেছে।

জাগ্রেব শহর কেন্দ্রের বাজার Dolac Market ছেড়ে একটু এগিয়ে গেলেই এক স্কোয়ার – Ban Jelačić Square এ এসে রয়্যাল আর্মির প্যারাড থামল, শুরু হল ঘোড়ার খেলা। এই স্কোয়ারের প্রধান আকর্ষণ Josip Jelačić এর ঘোড়ায় চড়া, উদ্যত তরোয়াল হাতে এক স্ট্যাচু। শহরের মাঝে এই স্কোয়ার ঘিরে চারপাশে নানা দোকান পাট, তাই এখানে লোক জনের আনা গোনাও প্রচুর। সেই স্ট্যাচুর নীচে সেনাদের অস্ত্র সস্ত্র বদল অনুষ্ঠান বেশ সমারোহের সঙ্গে পালন হল।

অনেকেই দাঁড়িয়ে সেনাদের কায়দা কানুন দেখে নিচ্ছে। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে ঘোড়াসহ সেনা দলের কসরত চলল। সেনা বদল বা পাহারাদার বদল শেষ হলে Royal Cravats আর্মি বাজনা বাজিয়ে শহরের অন্যান্য ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্যের দিকে এগিয়ে গেল, ওখানেও পাহারাদার বদল চলবে প্রায় দুপুর দুটো পর্যন্ত। ধীরে ধীরে বাজানার আওয়াজ দূরে মিলিয়ে গেল, সুরের এক হালকা রেশ রয়ে গেল উপস্থিত জনতার মনে।

জাগ্রেবে এ এক নতুন টুরিস্ট আকর্ষণ, এক নতুন সংযোজন। বহুদিন ধরে যুদ্ধে লিপ্ত, বিপর্যস্ত এই দেশ এখন ধীরে ধীরে নিজেদের ঐতিহাসিক, অর্থনৈতিক সম্পদ গুলোকে যত্ন করে গুছিয়ে নিচ্ছে। ফিরিয়ে আনছে শান্তির দিন, গৌরবময় রঙিন ইতিহাসের দিন, হাসি আনন্দের দিন, বৈভবের দিন, ভালো থাকার দিন।

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Croatia, Europe, Travel and tagged , , , , , , , , , , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান