প্যারিসের পথে পথে – দুই (Montmartre, Sacré-Cœur Basilica, Paris)

ধূসর মেঘলা আকাশের নীচে ডিসেম্বরের শীতে, ঝির ঝিরে বৃষ্টিতে, প্যারিসের Montmartre পাহাড়ি এলাকার পাথরে বাঁধানো সরু সরু গলিতে এখনো যেন পঞ্চাশের দশক থমকে আছে। এখানে এসে মনে হয়, যেন কোন এক পুরনো সাদা কালো ছায়াছবির জগতে পা রেখেছি। সেই পুরোনো রেস্টুরেন্ট, কাফে, বার এখনো পুরোনো ভাবেই সাজানো। এখানে পুরোনো মানুষেরা বাঁচে পুরোনো মতে, বাতাস সেই পুরোনো সময়ের বার্তা বয়।

প্যারিসের এই এলাকায় এক কালে বহু আর্টিস্টের বাসস্থান ছিল, তখনকার সময়ের যত নামকরা চিত্রকর – পিকাসো, ক্লদ ম্যনে, সালভাদর দালি, রেঁনোয়া, ভ্যান ঘগ সবাই এই এলাকায় ছিলেন ও কাজ করেছিলেন। রেঁনোয়ার ঘরটি এখনো সযত্নে সাজানো। পুরনো পরিবেশ বজায় রেখে, এখনো এই এলাকা আধুনিক চিত্রকরদের দখলে, রাস্তায় সাজানো থাকে সারি সারি ছবি। চাইলে নিজের কমিক স্কেচও করিয়ে নেওয়া যায়। তবে তীক্ষ্ণ উত্তুরে হওয়ার জন্যে ও ধূসর দিনের জন্যে ছবির সেই খোলা প্রদর্শনীতেও একটু যেন ধূসর ভাব। তবে ডিজিটাল ক্যামেরা ও ইন্টারনেটের এই যুগে কে আর ছবি কেনে? সবাই দেখে।

যাইহোক, আসলে এই Montmartre এলাকাকে আগে ঠিক প্যারিসের মধ্যে ধরা হত না, প্যারিস শহর কেন্দ্রের বাইরের এক পাহাড়, গ্রাম্য ভাব বেশী। নেপোলিয়ান যখন চাইলেন প্যারিসকে ইউরোপের সবচেয়ে সুন্দর শহর বানাবেন, প্যারিসের অনেক পুরনো বাসিন্দাকে উৎখাত করা হয়েছিল। ওরা এসে এই পাহাড়ের নীচে বসতি তৈরি করে, এখানে প্যারিস শহরের অনেক নিয়ম নীতি পালন হত না, এখানে ওয়াইন ছিল ট্যাক্স ফ্রি। তাই এই অঞ্চলে প্রচুর রেস্টুরেন্ট, নাইট ক্লাব ও বার গজিয়ে ওঠে। এমিলি সিনেমার শুটিং এই অঞ্চলেই হয়েছিল, তাই জায়গার আরেক আকর্ষণ এমিলি যে রেস্টুরেন্টে কাজ করতো – Café des 2 Moulins।

এখানে গলি পথের গোলক ধাঁধায় হারিয়ে যেতে যেতে পাহাড়ের উপরের ধবধবে সাদা এক গম্বুজ দৃষ্টি কেড়ে নেবেই – রোমান ক্যাথলিক চার্চ Sacré-Cœur Basilica র চূড়া। যে রাস্তাটি একদম উপরের দিকে চলে গেছে সেই রাস্তা ধরে উপরে যাওয়া যায়। তাছাড়া উপরে Sacré-Cœur Basilica র চত্বরে পৌঁছনোর অনেক উপায় আছে – স্থানীয় ছোট্ট বাস, কিংবা টুরিস্ট টয় ট্রেন অথবা ফুনিকুলার টুরিস্টদের বেসিলিকার চত্বরে পৌঁছে দেয়। এখানে এলে প্যারিসের বিস্তার দেখে মুগ্ধ হতেই হয়। অবশ্য মেঘলা দিনে দিগন্ত রেখায় প্যারিস ও তার প্রতীক যেন মুখ লুকিয়েছে।

প্যারিসের অন্যান্য স্থাপত্যের পাশে এই Sacré-Cœur Basilica শিশু – ১৮৭৫ এ এই চার্চের কাজ শুরু হয়ে ১৯১৪ তে শেষ হয়। সেই সময়ের এক অন্যরকম স্থাপত্যের নিদর্শন, সাদা পাথরে তৈরি বিশাল এই বেসিলিকার চত্বরে টুরিস্টের ঢল নামে সারা বছর। শীতের মেঘলা দিনও বাদ যায় না। রীতিমত ভিড় ঠেলে ঠেলে চার্চের ভেতরে ঢুকে একটু উষ্ণতা অনুভব করি। তীব্র ঠাণ্ডায় হয়তো অনেকেই চার্চের ভেতরে মানুষের ভিড়ে মানুষের হৃদয়ের ওম পেতে চায়।

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, France, Travel and tagged , , , , , , , , , , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান