প্যারিসে নতুন বছরে (New Year in Paris, France)

সেবার তুলুসে জাঁকিয়ে শীত পড়েছে, চ্যাটার্জি অ্যান্টির রামনভিলের বাড়ীতে ছুটির উজ্জ্বল দুপুরে কাপুচিনোর কাপে তুফান তুলে উষ্ণ আড্ডা জমে উঠেছে। আড্ডার বিষয় অবশ্যই আসন্ন ক্রিসমাসের ছুটিতে কে কোথায় বেড়াতে যাবে, আর মধ্যমণি অবশ্যই চ্যাটার্জি কাকিমা। ক্রিস্টমাসে প্যারিস কেমন আলোর মালায় সাজে, আইফেল টাওয়ারের নীচে শ্যাম্পেনের ফোয়ারায় কি ভাবে নতুন বছরকে স্বাগত জানায় প্যারিসিয়ানরা, এখানে যখন আছো, নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে একবার অন্তত প্যারিস যাও তোমরা – চ্যাটার্জি অ্যান্টি আমাদের রীতিমত নির্দেশ দিলেন।

রাতে বাড়ী ফিরে তাই প্রথম কাজই হল প্যারিসের টিকিট বুক করা। দক্ষিণ ফ্রান্সের তুলুসে থেকে প্যারিসের ঠাণ্ডা কত হতে পারে কোন কল্পনাই করতে পারি নি, উষ্ণ ঘরে বসে গুগুলের ওয়েদারে মাইনাসের ঘরে তাপমাত্রা দেখে দেখে তো আর ঠাণ্ডা অনুভব করা যায় না! আমাদের সঙ্গে রণ ও তার বাবা মাও চলেছে প্যারিসে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে। ছোট্ট রণের সে কি উৎসাহ।

প্যারিসে নামা মাত্র মাইনাস পাঁচ টেম্পারেচার ঠাণ্ডায় কেঁপে উঠলাম আমরা। তাড়াতাড়ি হোটেলে পৌঁছেই বিকেলের দিকে বেড়িয়ে পড়লাম Champs Elysées এর উদ্দ্যেশ্যে। সমস্ত প্যারিস যেন এই দিনে Champs Elysées এর দিকেই হাঁটছে। প্যারিসের সেই ধূসর কালো ভিড়ে মিশে হাঁটতে লাগলাম। এখানে লোকেরা এতোই কালো কিংবা ধূসর রঙের জ্যাকেট পড়ে যে ভিড়ের রঙ সর্বদাই এক রঙা হয়।

এক নীল লাল ঠাণ্ডা আলোর মালায় গোটা Champs Elysées সেজে উঠেছে যেন এক আনন্দ হাট বসেছে। Eiffel Tower এর দিকে যে রাস্তা গিয়েছে সহস্র মানুষ সেই দিকেই হাঁটছে। এমন দিনে শুধুই জনস্রোতে গা ভাসাতে হয়, এই স্রোত ঠিক নিয়ে যায় Eiffel Tower এর পাদদেশে। সাধারণত প্যারিসের আকাশ রেখায় Eiffel Tower কে দেখা যায়, এর চূড়ায় এক আলো জ্বলে ও সারা গায়ে জড়ানো থাকে আলোর মালা। কিন্তু, নতুন বছরের প্রাক্বালে দেখছি অন্ধকার। Eiffel Tower এর পাদদেশে মাইনাস পাঁচ ঠাণ্ডায় ঠাসাঠাসি ভিড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি নতুন বছরের জন্যে। অবশ্য এতো মানুষের গায়ের উত্তাপে হিম ঠাণ্ডা খুব একটা অনুভব হচ্ছে না। আমার আগে পিছে ভিড়ের হাতে শ্যাম্পেনের বোতল অপেক্ষা করছে সেই সন্ধিক্ষণের জন্যে। আমরাও ঘড়ির দিকে না তাকিয়ে পারিসিয়ানের সঙ্গে নতুন বছরকে স্বাগত করার জন্যে ভিড়ের মাঝে অপেক্ষায় রইলাম।

হঠাৎ এক আলোর ফুলঝুরি আকাশের দিকে ধাবিত হওয়া মাত্র জনতা চিৎকার শুরু করল। অন্ধকারের মধ্যে হঠাৎ Eiffel Tower এর সমস্ত আলো দপ করে জ্বলে উঠল ও মিউজিক সহকারে Eiffel Tower নানান রঙের আলোর খেলায় মেতে উঠল। এ এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা, পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে এক আশ্চর্যের সামনে দাঁড়িয়ে নতুন বছরকে যে এই ভাবে স্বাগত জানাব কখনোই ভাবি নি। বাক রুদ্ধ হয়ে গেল সেই বিশাল উদ্ধত সৌন্দর্যের সামনে দাঁড়িয়ে। মাঝ রাতে পুরনোকে বিদায় জানিয়ে নতুনকে বরণ করে নেওয়ার সেই উন্মাদিত আনন্দ স্রোতে প্রবাহিত হয়ে গেলাম আমরা।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, France, Travel and tagged , , , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s