July 2013, Riga, Latvia
ভিলিনিয়াস থেকে রিগা (Riga) পৌঁছতে বেশ রাত হয়ে গেল, রাত কি আর বলবো? ঘড়ির কাঁটায় রাত, আকাশে সূর্য এখনও ব্যস্ত রিগার ইমারত গুলোর উপরে অস্ত রাগের আলোর খেলা নিয়ে।
বালটিক্সের বৃহত্তম শহর রিগা, নিজস্ব লাটাভিয়ান সংস্কৃতির ঐতিহ্য ও নানা সময়ের নানান আক্রমণ কারীদের সংস্কৃতি বুকে আগলে রেখেছে। পুরোন দিনের বড় বড় ইমারত এই শহরকে আরও বেশী আকর্ষণীয় করেছে। এই শহর ইউরোপের মধ্যে অন্যতম টুরিস্ট গন্ত্যব্য।
দুগাভা (Daugava) নদী এই শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে। বাস ষ্টেশন একদম নদীর ধারে, ব্রিজের কাছে। পুরনো রিগা শহরের উঁচু বিল্ডিং দিব্যি দেখা যায়। দূর থেকে দেখা যায় রিগা ক্যাসলের চূড়া।
এই শহরে সোভিয়েত ইউনিয়নের ছাপ এখনও স্পষ্ট। আমরা যে হোটেলে থাকছি সেটা পুরনো দিনের রাশিয়ান আর্কিটেকচার দ্বারা তৈরি। এই শহরের ইমারতগুলোর এক তৃতীয়াংশের স্থাপত্যে আকর্ষণীয় Art Nouveau স্টাইলের প্রভাব পড়েছে তাছাড়া ১৯ শতকের কাঠের স্থ্যাপত্যের জন্য পুরনো রিগা শহর এখন UNESCO World Heritage Site।
পরের দিন পুরনো শহর আবিষ্কারের জন্যে সকালেই বেড়িয়ে পরলাম। আমাদের হোটেলের সামনেই আছে Nativity of Christ Cathedral, এই শহরের বৃহত্তম গোঁড়া ক্যাথিড্রাল। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সময় জার্মান সেনা রিগা দখল করে এই রাশিয়ান গোঁড়া(Russian Orthodox) চার্চকে লুথারন (Lutheran) চার্চ এ পরিণত করে। মেয়েদের মাথায় ঢাকা না নিয়ে ঢোকা নিষেধ। পরে সোভিয়েত যুগে এই বিল্ডিং Planetarium ও রেস্টুরেন্ট ছিল, কিন্তু এখন সম্পূর্ণ নতুন ভাবে তৈরি এই চার্চ রিগার মানুষের কাছে সম্পূর্ণভাবে গোঁড়া ক্যাথিড্রাল। এই সুন্দর বিল্ডিং লাটাভিয়ান স্থাপত্য ও স্থায়িত্বের প্রতীক।
হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম টাউন হল এবং Ratslaukums Square বা Town Square, মধ্য যুগে এখানে খোলা আকাশের নীচে প্রতিদিন বাজার বসতো। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় বোমা বর্ষণে টাউন হল এবং টাউন স্কোয়ার সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। এখন অবশ্য পুরোপুরি মেরামত করা হয়েছে। এখানে Occupation Museum এর বিল্ডিং-এ সোভিয়েত যুগের স্থাপত্য নজরে পড়ে।
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে এই শহরের অনেক জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কিন্তু সমস্ত ক্ষত আজ ঢাকা পরে গেছে, যেমন, House of Blackheads ১৪ শতকের রিগার অন্যতম সুন্দর ইমারত। এখানে থাকতো অবিবাহিত ব্যাবসাদার। এই চত্তর ধনী বড়লোকের জায়গা ছিল, কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় এই বিল্ডিং মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কিন্তু ১৯৯৯ সালে সম্পূর্ণ ভাবে মেরামত করা হয়, ঠিক যেমনটি ছিল আগে তেমন করে তৈরি হয় আবার।
ম্যাপ দেখে ও St. Peter’s Church এর সূচলো চূড়া লক্ষ্য করে হাঁটতে লাগলাম। ১২ শতকের কাঠের এই চার্চ নতুন করে পাথরের বানানো হয়েছে। ভেতরে লিফট করে একদম চূড়ায় পৌঁছে যাওয়া যায়। উপর থেকে সুন্দর রিগা শহর দেখা যায়।
এই শহরে অনেক কিছু আবিষ্কার করার আছে, কিছুটা পরের দিনের জন্য তোলা রইল।