দক্ষিণ ফ্রান্সের সেত্‌ সৈকত (Sète, Southern France)

দক্ষিণ ফ্রান্সের তুলুস থেকে কিছু দূরেই Languedoc-Roussillon  এলাকার যে সমুদ্র শহর ও সৈকত গুলো আছে, যেমন ধরা যাক Perpignan , Narbonne, Sète , Montpellier , Collioure ইত্যাদি। এই সমুদ্র শহর গুলো স্থানীয়দের কাছে গরমের ছুটি কাটানোর এক উত্তম জায়গা।

এই দিকের ছোট ছোট সমুদ্র তট গুলোয় ভিড়ও অপেক্ষাকৃত অনেক কম, স্থানীয় মানুষদের ভিড়ই একটু বেশী বলা যায়। গরম পড়লেই তুলুসের মানুষ শহর খালি করে ঐ সব সমুদ্র শহর গুলোয় চলে যায়। তাই, আমরাও সেবার গরমের ছুটিতে দক্ষিণ ফ্রান্সের এই দিকের সমুদ্র শহর ও তট গুলোকে একে একে দেখে নেওয়ার পরিকল্পনা করে নিয়েছিলাম।

এখানের সমুদ্র তীরের মানুষ খুব একটা বাইরের টুরিস্ট দেখে না – বিশেষ করে আমাদের মতো টুরিস্ট দেখতে এরা খুব একটা অভ্যস্ত নয়, তাই এরা আমাদের দেখে বোধহয় একটু অবাকই হয়।

তাই, সেত্‌ সমুদ্র তটে যাওয়ার মুখে যে আইসক্রিমের দোকান আছে, সেই দোকানের ফরাসী মালিক আইসক্রিমের কাপে আইসক্রিম ঢালতে ঢালতে অবাক চোখে আমাদের দেখতে দেখতে জানতে চেয়েছিল – তোমরা এই ছোট্ট জায়গার কথা জানলে কি করে?

ওর চোখে কৌতূহল উপছে পড়ছিল। না, ঐ ফরাসী লোকটির কোন দোষ নেই। আমাদের দেশের কোন এক কোণের সমুদ্র তটে কোন এক ফরাসী মানুষ চলে গেলে, তাকেও ঐ ধরণের কৌতূহলের মুখোমুখি হতে হবে।

আসলে, সচরাচর ফরাসীরা বাইরের মানুষের সঙ্গে খুব একটা কথা বলতে ভালোবাসে না, ওরা একটু নিজেদের মধ্যে থাকতেই ভালোবাসে, ফরাসীদের মধ্যে অহেতুক কৌতূহলটা একটু কম – কিন্তু, এই সমুদ্র শহরে দেখি ফরাসীরা বাইরের মানুষকে দেখে কৌতূহলী হয়, কথা বলতে ভালোবাসে, জানতে চায়। আলাপ করে খুশী হয়।

আমারা তুলুসেই থাকি, এই অঞ্চলের সমুদ্র তট গুলোকে আরও ভালো করে দেখার জন্যে বেড়িয়েছি – আমাদের উত্তর শুনে লোকটির চোখে মুখে যেন গর্ব ঝড়ে পড়ল।

বলল – দেখো, ভালো করে দেখো। আমাদের দেশ খুবই সুন্দর, শহর সুন্দর। ফিরে গিয়ে আমাদের কথা বল, আমাদের জায়গার কথা বল। বলে, লোকটি আরও এক স্কুপ আইসক্রিম বেশী দিয়ে দিল – বলল – অতিথির জন্যে।

ওর জায়গাকে, ওর শহরকে যেন বাইরের মানুষরা তার দেশে ফিরে গিয়ে ভালো বলে, প্রশংসা করে – সেই জন্যে তার এই ছোট্ট চেষ্টা আমাদের মন ছুঁয়ে দিয়েছিল।

ফ্রান্সের সেত্‌ শহরের এই সমুদ্র তীরে এসে প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে যাবে। এই শহরে যারা বসবাস করে তাদের বলা হয় – Sétois । Mont St Clair পাহাড়কে ঘিরে এই শহরের বেড়ে ওঠা। এখানে মানুষ সহজ সময় কাটাতে, মাছ ধরতে বড়ই ভালোবাসে।

অনেকে বলে, ফরাসীদের এই দিকের মেডিটেরিয়ানের মধ্যে এক নিজস্বতা আছে, আতিথেয়তা আছে। এখানে নাকি ফরাসী মেডিটেরিয়ানের আসল চেহারা দেখা যায়, আসল চরিত্র বোঝা যায়, অনুভব করা যায় – যেখানে ফ্রেঞ্চ রিভেইরার মতো নেই অর্থের অহেতুক আড়ম্বর – সহজ সরল, প্রাকৃতিক মেডিটেরিয়ানকে দেখতে হলে অতি অবশ্যই এই শহরে আসতে হয়। কিছু দূরেই আছে স্পেনের সীমান্ত।

সমুদ্র ক্যানাল এসে সেত্‌ শহরটিকে ছুঁয়েছে – ক্যানালের দুই পাশে দাঁড়ানো আধুনিক নৌকো গুলো সমুদ্র শহরের দৃশ্য তৈরি করে দিয়েছে – তাই, অনেকে আবার এই শহরকে ফ্রান্সের এই অঞ্চলের ভেনিসও বলে। এই শহরবাসীর ঐ আধুনিক নৌকো গুলোই শহরের মধ্যে সামুদ্রিক মাছের যোগান দেয়।

ক্যানালের পাশের রাস্তাটি ধরে হাঁটতে হাঁটতে সমুদ্র তটে পৌঁছে যাওয়া যায়। সাধারণত গরমের সময়ে ফরাসী সমুদ্র সৈকত গুলোতে গা ঘেঁষাঘেঁষি ভিড় দেখা যায় – কিন্তু, সেত্‌ সৈকতটি একদমই ব্যতিক্রমী, হালকা ভিড় কাটিয়ে অনায়াসে মেডিটেরিয়ান সমুদ্রে স্নান সেরে নেওয়া যায়। তারপর, সামুদ্রিক মাছ দিয়ে লাঞ্চ সেরে নিয়ে শহরটিকে দেখে নেওয়া।

উদার নীল সমুদ্র, ঝকঝকে দিনের নীল আকাশ ও সমুদ্র শহরের সামুদ্রিক খাওয়া দাওয়া, ছোট্ট ছোট্ট আতিথেয়তা, আলাপচারিতা, সুন্দর সেই সমুদ্র শহরকে ছুঁয়ে এসেছিলাম, সেই শহরের বুকে মেডিটেরিয়ান সমুদ্র ছুঁয়ে আসা সতেজ হাওয়ায় নিঃশ্বাস নিয়েছিলাম –  ইত্যাদি নিয়ে আমাদের ভ্রমণ পথের গল্প গুলো তৈরি হয়।

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, France, Travel, Western-Europe and tagged , , , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান