রোমের জন্ম যেখানে (The Palatine Hill, Rome)

এপ্রিলের ঝকঝকে উজ্জ্বল দিনে, ফুরফুরে আবহাওয়াকে সঙ্গী করে নিয়ে, কলোসিয়াম ছাড়িয়ে পাহাড়ের দিকে হাঁটতে হাঁটতে প্রচুর টুরিস্ট যে পাহাড়ে এসে উপস্থিত হয় – নাম তার Palatine Hill,  এখানে এসে চারিদিকে নানা যুগের ভগ্ন স্তূপের ছড়াছড়ি দেখে, রোমের জট পাকানো ইতিহাসের স্বর্ণ যুগকে অনুমান করে নেওয়াটা বেশ মুশকিলই বলা যায়, অন্তত প্রথম দেখায় আমার তো তাই মনে হয়েছিল।

রোমে যে সাতটা বিখ্যাত পাহাড় আছে তার মধ্যমণি এই Palatine Hill, রোমের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্যে ঘেরা এই পাহাড়কে তাই এড়িয়ে চলা যায় না। এই পাহাড়, রোমের সবচেয়ে প্রাচীন অংশের মধ্যে গণ্য হয়।

এই জায়গার ইতিহাস, উৎপত্তি, উন্নতি, ধ্বংস নিয়ে যেমন বহু স্থানীয় লোককথা প্রচলিত, তেমনি পৃথিবীর নানা দিকের রোম বিশেষজ্ঞ ও ঐতিহাসিকদের মধ্যেও প্রচুর মতভেদ আছে। রোমান পুরাণের সঙ্গে যুক্ত এই পাহাড় নিয়ে প্রচুর গল্প গাঁথা প্রচলিত, কথিত আছে – এই পাহাড়ের গুহায় নেকড়ে, Romulus ও Remus – দুই জমজ ভাইকে লালন পালন করেছিল। যারা ছিল রোম শহরের প্রতিষ্ঠাতা। আর এই জায়গা থেকেই রোম শহরটি গড়ে উঠেছিল ও রোমান সাম্রাজ্যের সূচনা হয়েছিল। রোমের প্রজাতন্ত্রের যুগ থেকেই বহু প্রভাবশালী রোমান ব্যক্তিত্বের ঠিকানা ছিল এই পাহাড়।

মার্ক এন্টোনি, জুলিয়াস সিজার থেকে শুরু করে, রোমান সম্রাট নিরোর প্রাসাদও এই জায়গায় ছিল, তারপর আরও কতো রোমান রহস্যের চাদর জড়িয়ে এই পাহাড়ের ধ্বংসস্তূপ গুলো দাঁড়িয়ে আছে – তবে ইতিহাস যাই হোক না কেন, মানুষের বসবাসের হাজার বছরের ইতিহাসের সাক্ষী নিয়ে যে জায়গা, সেখানের ধ্বংস স্তূপের পাশে দাঁড়িয়ে, পৃথিবীর বুকে মানুষের হাজার বছরের পদযাত্রার চিহ্ন গুলোকে দেখে এক অদ্ভুত রোমাঞ্চ হয় – আর সেই রোমাঞ্চের স্বাদ নিতেই মানুষ দলে দলে রোম দেখতে আসে।

আঠারো শতাব্দীর মাঝামঝি সময় থেকে এই জায়গায় খননের কাজ শুরু হয়েছিল, ধীরে ধীরে রোমান সভ্যতার নানা যুগ ও তার ইতিহাস মানুষের সামনে আসে – এমনকি এখানে ব্রোঞ্জ যুগের মানুষের বসবাসের নিদর্শনও পাওয়া গিয়েছিল। উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে রোমের ভগ্ন দশার বিস্তারিত রূপ দেখতে দেখতে অনেকেই সময় কাটিয়ে দেয়। এখানে একদিকে আধুনিক রোমের ঝলক, পৃথিবীর নানা প্রান্তের টুরিস্টের আসা যাওয়া, আনাগোনা – সব মিলিয়ে বিশাল এই ভগ্ন স্তূপ আর নিস্প্রান হয়ে থাকে না – রোমের ভগ্ন প্রাসাদের প্রাঙ্গন নবীন প্রানের গুঞ্জনে ভরপুর হয়ে ওঠে। এপ্রিলে ফুটে ওঠা নানা ধরণের উজ্জ্বল ফুল, গভীর নীল আকাশ ও ঝকঝকে উজ্জ্বল দিন প্রাচীন রোমের ভগ্ন দশার সমস্ত মলিনতা, সমস্ত মনখারাপ ধুইয়ে দেয় – রোমের ভগ্ন প্রাসাদ বরণ করে নেয় নবীনকে।

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Italy, Southern-Europe, Travel and tagged , , , , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান