তুলুস দিন, নানা কথা ( Place Wilson, Toulouse)

এখানে অচেনা ভিড়ে হঠাৎ চোখে পড়তে পারে কোন এক চেনা মুখ, বা অচেনা ভিড়ের মাঝ থেকে হঠাৎ-ই চেনা কেউ ডেকে উঠতে পারে আমার নাম, বলতে পারে, চল পাশের কফি শপে বসে এক কাপ কফি খাই, একটু গল্প করি বা চল পাশের সিনেমা হলে নতুন সিনেমা দেখে নি, কিংবা চল দুই কদম একসঙ্গে চলি, শহর দেখি – তুলুসের হৃদয় কেন্দ্রের অন্যতম প্রধান চত্বর ‘প্লেস উইলসন’ এর এমনি মহিমা।

তুলুসে এসেই প্রথম যে চত্বরের সঙ্গে খুবই ভালো ভাবে পরিচয় হয়েছে, তা এই প্লেস উইলসন ও তার কেন্দ্রের ঝর্ণা। ঝর্ণার একদম মাঝে ফরাসী নেতা Jean Jaurès এর স্ট্যাচু এই চত্বরের মুখ্য আকর্ষণ।

Jean Jaurès এর স্ট্যাচু ও ঝর্নাকে ঘিরে বসার জন্যে প্রচুর বেঞ্চ, চেয়ার। অনেকেই এখানে বসে তুলুসের নিজস্ব পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত হয়, তাই, বিদেশ বিভূঁই হয়েও এই জায়গা যেন আমার অতি চেনা পরিচিত হয়ে গিয়েছিল। চারপাশে লাল ইটের তৈরি পুরনো দিনের বিল্ডিং গুলোয় নানান ধরণের ফরাসী দোকান, ক্যাফে, পারফিউমারি, রেস্টুরেন্ট গুলো যেন এই চত্বরকে প্রান দিয়েছে।

বিশাল চত্বরের ছুটির দুপুরে ঘুরতে ঘুরতে, ভিড় দেখতে দেখতে, পাশের বিশাল পারফিউমারির সামনে দেখা হয়ে যেতেই পারে আমার চেনা চীনা বন্ধুটির সঙ্গে, সে বলতেই পারে – দেশে যাওয়ার জন্যে পারফিউম কিনে নিয়ে যেতে চাই, চল না একটু পারফিউম কিনতে সাহায্য করবে।

আর, সেই ছুটির বিকেল হয়তো নানান ধরণের ফরাসী পারফিউমের গন্ধ বিচার করেই কেটে যেতে পারে – এমনি উদ্দেশ্যহীন ছোট ছোট মুহূর্তে পরিপূর্ণ এখানের পরিবেশ, এই প্লেস উইলসন চত্বরে ছুটির দুপুরে বেশ এক শপিং শপিং আমেজ থমকে থাকে – আর ক্রিসমাস, সামার বা উইন্টার সেলের মরশুম হলে তো কথাই নেই – গা ঘেঁষাঘেঁষি ভিড় শুরু হয়।

ক্রিসমাসের মরশুমে সামনের বড় গাছে লেগে যায় আলোর মালা – আর তখন এখানে চারিদিকের এক শীতল আলোয় সন্ধ্যে গুলো হয়ে ওঠে মোহময়, আরও অচেনা। পরিবেশ হয়ে ওঠে আরও শীতল, তবু আরও জমজমাট হয়ে ওঠে তুলুসের এই কেন্দ্র, প্রচুর মানুষের আনাগোনায় উষ্ণ হয়ে ওঠে এই চত্বর। এদিকে আবার শীতে, গলির মোড়ে মোড়ে শুরু হয়ে যায় কয়লার আগুনে চেস্ট নাট সেঁকা – দু’ইউরোয় একশো গ্রাম, অপূর্ব স্বাদ।

আর, শীতের শীতল বাতাস সেই চেস্ট নাট পোড়ার এক অদ্ভুত, মাতাল, উষ্ণ গন্ধ বয়ে আনে, ম ম করে ওঠে সমস্ত প্লেস উইলসন চত্বর – অদ্ভুত এক মাদকতা ছড়ায় পরিবেশে, চেস্টনাট পোড়ানোর এক অদ্ভুত থমকে যাওয়া সুবাস জায়গাটাকে মাতিয়ে রাখে -তুলুস স্মৃতির সঙ্গে জড়িয়ে যায় সেই সুবাস।

আমাদের তুলুস বসবাসের প্রথমের দিকে কতো তুলস বিকেল ও সন্ধ্যা, যে এখানে শুধু মাত্র মানুষ দেখতে দেখতেই কেটে গেছে, তার কোন হিসেব নেই। নতুন জায়গা, নতুন মানুষ, নতুন দেশ, নতুন ভাষা – তখন আমাদের কাছে তুলুসের সবই ছিল এক আশ্চর্য রঙিন লেফাফায় মোড়ানো এক চমক। দিনগুলো ছিল আবিষ্কারের দিন, অচেনাকে চেনা, অজানাকে জানার দিন।

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in France, Western-Europe and tagged , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান