গুজরাটের গির অরণ্যে (Gir Forest, Gujarat, India)

প্র্যত্যেক জঙ্গলেরই বোধহয় এক নিজস্ব আদিম চরিত্র আছে, আছে এক গন্ধ, মাদকতা, রহস্যময়তা। আছে এক নিস্তব্ধতা, কিংবা বলা যায় প্রকৃতির এক নিজস্ব আদিম আওয়াজ আছে – যা একমাত্র জঙ্গলেই শোণা যায় – সে একটানা ঝিঁঝিঁর ডাকই হোক বা বনময়ূরের তীক্ষ্ণ কর্কশ আওয়াজ, কিংবা শুকনো গাছের পাতার উপরে হেঁটে যাওয়া হরিণ দলের পায়ের আওয়াজ – আর জঙ্গলের সেই রুক্ষ, বন্য, প্রাচীন আদিমতার সঙ্গে মুখোমুখি হতে হলে অবশ্যই গির অরন্যে একবার আসতে হয়। প্রকৃতি এখানে সত্যিই বড় আদিম, রুক্ষ, বন্য।

বসন্ত ঋতুর আগমনে গির অরন্য যেমন নিঃস্ব, রুক্ষ, শুষ্ক, তেমনি পলাশ ফুলের আগুন রঙে মাতাল করা রঙিন – এতো শুষ্কতা, রুক্ষতা, নিঃস্বতা আগে কখনো দেখেছি বলে মনে পড়ছে না – তবুও যেন এক অদ্ভুত উদাসীন সৌন্দর্য জড়িয়ে আছে জঙ্গলের গায়ে – মার্চের মাঝামঝি সময়ে গাছের পাতা গুলো ঝরে গিয়েও, গির অরণ্যের রং যেন ঠিক ধূসর নয়, গেরুয়া ও ধুলো রঙের মাঝামাঝি এক অদ্ভুত রং।

ঠিক যেন, হরিণ দলের গায়ের রঙের সঙ্গে মেলানো এক রং – যে রঙের সঙ্গে রং মিলিয়ে গা ঢাকা দিয়ে হরিণরা নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াতে পারে, মোটরের আজয়াজ শুনে চকিত দৃষ্টি মেলে চেয়ে দেখতে পারে – কারা এলো সভ্যতার শব্দ করে, এই জঙ্গলের আদিম নির্জনতার দেশে। সাধারণ টুরিস্ট বুঝে নিয়ে, হরিণের পাল আবার মগ্ন হয়ে যেতে পারে নিজেদের পারিবারিক মধ্যাহ্ন বিশ্রামে, কিংবা কোন কোন অতি সতর্ক ও চঞ্চল হরিণ বা হরিণী একটু দৌড়ে গিয়ে শুষ্ক গভীর জঙ্গলের গায়ে মিশে যেতে পারে।

জঙ্গলের মাঝ বরাবর পিচঢালা কালো রাস্তা এক অজগর সাপের মতো চলে গেছে, রাস্তায় চোখ রাখলে দূরের রক্ষ পাহাড়ের গায়ে গিয়ে দৃষ্টি আটকে যায় – প্রকৃতির রুক্ষতা সেখানেও নিরাশ করে না।

আবার, ঠিক দুপুরে, পথের ধারে বনময়ূরী ঘাড় বাঁকিয়ে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকতে পারে, অথবা বনময়ূর তার বিশাল পেখম নিয়ে রাস্তা ক্রস করবে, কি করবে না – সে নিয়ে চিন্তায় পড়ে যেতে পারে। কিংবা, শেয়াল তার শিকার নিয়ে মধ্যাহ্ন ভোজে ব্যস্ত থাকতে পারে – সেই সময়ে তার জঙ্গলের সীমানায় কে এল, কে গেল, সে নিয়ে তার কোন ভ্রূক্ষেপ নাও থাকতে পারে।

মার্চের মাঝামাঝি সময়ে, গুজরাটের এই অঞ্চলের পথে যেতে যেতে দেখি – প্রকৃতির শুষ্কতা ও রুক্ষতা নিয়ে মানুষ এতোই সুনিশ্চিত, যে শুকনো নদীখাতেও বাড়ী তুলে দিয়ে বসবাস করতে দ্বিধা করে না! – নদীতে জল আসার সম্ভাবনাও কি নেই? স্পষ্ট বোঝা যায় একসময় সেখানে নদী ছিল, নদীর উপরে সেতুও আছে – নদীর সমস্ত চিহ্ন বয়ে নিয়ে নদীখাত আছে, শুধু জলই নেই, আছে ধূ ধূ বালু চর – আর প্রকৃতির এই সাংঘাতিক শুষ্কতার মধ্যেও যে গির অরন্য তার অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারে, তার বন্য পশুদের রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারে – সেটাই হয়তো প্রকৃতির এক আশ্চর্য খেলা।

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Asia, Gujarat, India, Travel and tagged , , , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান