সেই হলুদ শাড়িটি

মিতুর মায়ের এক হলুদ শাড়ি ছিল – হুম্‌, মায়ের শিফন শাড়িটির রং ছিল এক্কেবারে সর্ষে ফুল হলুদ। মিতুর স্পষ্ট মনে আছে। সরস্বতী পুজো মানেই মায়ের সেই  হলুদ শিফন শাড়ি পড়ে পাড়ার পুজোয় পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া – এই ছিল ছোট্ট মিতুর নিয়ম।

আর, সেই জন্যেই বোধহয় মিতুর স্মৃতির রং, ছেলেবেলার রং হলুদ- উজ্জ্বল হলুদ। বয়স বাড়তে বাড়তে কি সেই উজ্জ্বল হলুদ এর একটু রং চটে গেছে? একটু ফিকে হয়ে গেছে?

আজও, জীবনের অস্ত রাগে এসে মিতু মনে মনে সেই ছেলেবেলার হলুদের উজ্জ্বলতা খোঁজে, রং খোঁজে।

বয়স যতই বাড়ে – এক বিন্দু, এক বিন্দু করে অতীত দীর্ঘ হয়, স্মৃতির তালিকা বাড়ে, ভবিষ্যৎ হতে থাকে সংকুচিত, ভীরু। সেই সময়ে যেন অতীতটাকেই বড্ড ভালো লাগে।

আজকাল মিতু মাঝে মাঝেই, মনে মনে তাঁর ছেলেবেলার সেই শহরেই বসবাস করে। সেই ছেলেবেলার শহরের গলি গুলো যেন মানসচক্ষে স্পষ্ট ভেসে ওঠে।

মায়ের হলুদ শাড়ির আঁচলেই যে মিতুর এক গোটা জীবনের স্বপ্ন বোনা শুরু হয়েছিল। কবে সেই হলুদ শাড়িটির রং বদলে যেতে শুরু করেছিল, তা মিতু বড় হতে হতে বুঝতেই পারে নি।

এক ঝাঁক ছোট্ট মেয়ের দল যখন হলুদ শাড়ি পড়ে কল কল করতে করতে সরস্বতী পুজো মণ্ডপের উদ্দেশ্যে চলে গেল – মিতুর মনে সেই হলুদের উজ্জ্বলতা এসে স্মৃতির এক ঝাপটা দিয়ে গেল।

হলুদ ছিল মিতুর প্রিয় রং – এক হলুদ সালোয়ার কামিজ পড়ে সিকিমের সবুজ রাস্তা ধরে সেদিন মিতু হেঁটে যাচ্ছিল – প্রজাপতির এক দল সেই হলুদ সালোয়ার কামিজকে ঘিরে উড়তে উড়তে মিতুর গায়ে বসে পড়েছিল। সেই প্রজাপতির পাখার তিরতিরে কম্পনে ছিল স্বপ্নের রেনু – যা আজও মিতুকে ছেয়ে আছে।

প্রকৃতির সেই নিশ্চিন্ত ভাব, উদাসীনতা মিতুকে যেন সারাটা জীবন ঘিরে রেখেছিল, এক রকম ভাবে মিতুকে প্রকৃতি যেন লালন পালন করেছিল। জীবন মোড় নিয়েছে বহু বার, বহু দিকে, বহু ভাবে – কিন্তু, মায়ের সেই হলুদ শাড়ি, সেই হলুদ রং, সেই হলুদ দিন গুলো যেন মিতুর বার্ধ্যকের এক নতুন রং – যার স্বপ্নে বিভোর মিতু যাত্রা করবে এক অনন্তের উদ্দেশ্যে।    

Posted in Fiction | এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান