বিশাল এক সোনালি গোলোকের উপরে এক মানুষ দাঁড়িয়ে – সেলজবার্গ শহরের ঐতিহাসিক কেন্দ্রে, পাহাড়ের উপরের প্রাচীন ক্যাসলের ধূসর দৃশ্যপটে এই আধুনিক ঝকঝকে ভাস্কর্যকে প্রথম দর্শনে হয়তো একটু বেমানান ঠেকতে পারে, কিন্তু, ২০০৭ এ সেলজবার্গের ঐতিহাসিক শহর কেন্দ্র Kapitelplatz এ এই গোলকটি স্থাপিত হওয়ার পর থেকে, এই গোলক যেন ঐতিহাসিক সেলজবার্গের পরিচয়ের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গেছে – আধুনিক এই শিল্পকলা সেলজবার্গের সমস্ত ঐতিহাসিকতার মধ্যে ধীরে ধীরে নিজেকে দিব্যি মানিয়ে নিয়েছে।
সেলজবার্গ ক্যাথিড্রালের পাশে এই আধুনিক শিল্পের উপস্থিতি প্রাচীন ও নবীনের সহাবস্থানের এক প্রতীক বলা যায় – যা কিনা, এক অদ্ভুত আর্ট প্রোজেক্টের ফল। যার শুরু হয়েছিল ২০০২ এ। সেলজবার্গের এক প্রাইভেট আর্ট ফাউন্ডেশন দশ বছরের জন্যে এক প্রোজেক্ট শুরু করেছিল – যেখানে, প্রতি বছর বিশ্বের নামকরা আধুনিক আর্টিস্টকে সেলজবার্গে নিমন্ত্রণ করা হয় – ও তাদের দিয়ে বিশালাকার আধুনিক ভাস্কর্য তৈরি করানো হয়, আর সেই ভাস্কর্য গুলো সেলজবার্গের নানা জায়গায় স্থাপন করা হয় – বিশেষ করে, ঐতিহাসিক সেলজবার্গ শহরকেন্দ্রের নানান জায়গায় ভাস্কর্য গুলো দেখা যায়। আর তাই গত দশ বছর ধরে সেলজবার্গের মানুষ, আধুনিক শিল্পীর তৈরি নানান আধুনিক শিল্পকর্মের সম্মুখীন হয়েছে।
এই বিশাল সোনালি গোলকটির জন্ম সেই আর্ট প্রোজেক্টের ষষ্ঠতম বছরে। আর্টিস্ট Stephan Balkenhol এর মস্তিষ্ক প্রসূত এই আধুনিক শিল্পকর্মের নাম “Sphaera”। আর্ট প্রোজেক্টের ষষ্ঠতম বছরে এর জন্ম হলেও, Stephan Balkenhol এর এই ভাস্কর্য শহরের সবচেয়ে ভালো জায়গায় স্থান পেয়েছে – যা সেলজবার্গে নবাগতদের নজর কেড়ে নিতে বাধ্য।
পুরনো সেলজবার্গ শহর কেন্দ্রের বিশাল এই Kapitelplatz স্কোয়ারে পা রাখলে, প্রথমেই চোখে পড়ে এই Sphaera – স্থানীয় জীবন যাপনের সঙ্গে যা ধীরে ধীরে জুড়ে গেছে – এপ্রিলের দুপুরে Sphaera র ছায়ায় বসে ও দাঁড়িয়ে দাবা খেলা চলে। বিশাল আকারের ঘুঁটি সাজিয়ে স্থানীয়রা খুব মনোযোগ দিয়ে দাবা খেলতে ভালোবাসে – পথ চলতি কেউ চাইলে এক চাল দিয়ে যেতে পারে। আর দাবা, সোনালি গোলক, পাহাড়ের উপরের ক্যাসল, ঐতিহাসিক সেলজবার্গ, ঝকঝকে উজ্জ্বল দিন, সোনালি রোদ্দুর, পাহাড় – সব মিলিয়ে এক ছুটির ছবি তৈরি হয়। বহু বিদেশী সেই ছুটির ছবি সঙ্গে নিয়ে ফেরে – যে ছবি রয়ে যায় তাদের মনে।