প্রাচীন প্রাগের চারিদিকে ঐতিহাসিক স্থাপত্যের মাঝে আচমকা অত্যাধুনিক, অথচ অদ্ভুত আকারের এক স্থাপত্যের উপস্থিতি দেখে, মনে হতেই পারে – কোথাও যেন একটা ভুল হয়ে গেল। কিন্তু, না এক্কেবারেই ভুল নয়, ক্রয়েশিয়ান-চেক ও ক্যানাডিয়ান-আমেরিকান আর্কিটেক্টদের যুগ্ম মস্তিষ্ক প্রসূত অত্যাধুনিক স্থাপত্যের নিদর্শন – এই ডান্সিং হাউস।
ভালতাভা নদীর ধারে যেখানে সারি সারি বারোক, গথিক ও Art Nouveau স্থাইলের প্রাচীন স্থাপত্য প্রাগের ঐতিহাসিক বৈশিষ্ঠ নির্ধারণ করে, সেখানে নব্বইয়ের দশকে একটা খালি জায়গা – যেখানে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের শেষের দিকে আমেরিকা দিক ভুল করে বোম্বিং করে দিয়ে প্রাচীন স্থাপত্য ধ্বংস করেছিল, সেখানে ঐ ধরণের অত্যাধুনিক স্থাপত্য তৈরি করে দেওয়াটা যে প্রাগ বাসীরা খুব ভালো নজরে দেখেছিল, তা কিন্তু নয়।
খাপছাড়া গোছের এই স্থাপত্য প্রাগের প্রাচীন ঐতিহাসিক চরিত্রের সঙ্গে কোথাও একটুকুও মেলে না, তাই প্রাগের নানান মহলে এই স্থাপত্যকে ঘিরে প্রতিবাদের মেঘ ঘনিয়েছিল, কিন্তু, তৎকালীন চেক প্রেসিডেন্ট এই আধুনিক প্রজেক্টে রীতিমত সমর্থন করেছিলেন।
প্রথমে হলিউডের দুই শিল্পী ফ্রেড ও জিঞ্জার রজারস এর নামে এই বিল্ডিঙের নামকরণ হয়েছিল, কিন্তু, প্রাগের মানুষ এই বিল্ডিংকে ডান্সিং হাউস বলতেই পছন্দ করে। আর এই অদ্ভুত বিল্ডিং নৃত্যরত অবস্থায় কি ভাবে দাঁড়িয়ে আছে তা স্থানীয় মানুষদের যেমন আশ্চর্য করে, তেমনি, টুরিস্টদেরও অবাক করে। ব্যতিক্রমী উপস্থিতি দিয়ে সবারই নজর কেড়ে নেয় এই ডান্সিং হাউস।
তাই মনে হয়, সবাই যখন একই রকম ভাবে, একই রকম ভাবে চলে, একই কথা বলে, তখন, একটু আলদা ভাবার, আলাদা বলার, আলাদা করার মতো সাহস যাদের থাকে তাঁরাই নতুন দিশা তৈরি করে, নতুন পথ বানায়, ব্যতিক্রম তৈরি করে – আর নতুন নজির সৃষ্টি করে, তবে সেই ব্যতিক্রমী চিন্তা ধারা বা ডিজাইন যে সবাই অনুসরণ করবে, সবক্ষেত্রে তা কিন্তু নয়, তবুও, সেই ‘ব্যতিক্রম’ অদ্বিতীয় হওয়ার মর্যাদা পায়। আর সেই আলাদা ভাবার, আলাদা করার, অদ্বিতীয় হওয়ার জলজ্যান্ত উদাহরণ প্রাগের ডান্সিং হাউস।