ভে…নি…স – শহরটির নামেই যেন শতাব্দী প্রাচীন এক স্বপ্নময় ছবি জড়ানো, বহুবার বহু ভাবে ইংরেজি থেকে শুরু করে নানা ভাষার চলচিত্রে শহরটিকে এতো বার দেখানো হয়েছে, যে এই শহরের গলি পথ ধরে হাঁটা যেন কোন এক স্বপ্ন পথ ধরে হাঁটার মতো ব্যাপার, স্বপ্ন সত্যি হয়ে যাওয়ার মতো ব্যপার – শহরটির প্রতিটি জলজ গলিপথ গুলো যেন চলচিত্রের সাজানো সেট।
শুধু আধুনিক যুগের চলচিত্র শিল্প মাধ্যম কেন – আঠেরো, থেকে উনিশ শতাব্দীর রোম্যান্টিক যুগের কবি, সাহিত্যিক, শিল্পীদেরও যে প্রেরণা ছিল ভেনিস। Claude Monet ভেনিসের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে, ভেনিস সিরিজ এঁকে ভেনিসের সৌন্দর্যকে যেন আরও গভীর ভাবে প্রকাশ করেছেন। ভেনিস ছিল Monet এর বিখ্যাত ভেনিস সিরিজের প্রেরণা।
আর, তাই পৃথিবীর নানা দিকের টুরিস্টরাও ভেনিসের সৌন্দর্যকে আবিষ্কার করে নিতে চায়, নিজের চোখে দেখে নিতে চায় এই শহরের রহস্যময় আশ্চর্য সৌন্দর্যকে – ভেনিসের জলপথ ধরে যেমন এই শহর দেখা যায়, তেমনি স্থলের গলিপথ ধরে হেঁটেও এই শহরের ছন্দকে আবিষ্কার করা যায়।
ভেনিসের প্রধান স্কোয়ার – সান মার্ক স্কোয়ারে যখন টুরিস্টের ভিড়, গলিপথ ধরে একটু হেঁটে ভেতরের দিকে শহরের অন্য দিকে গেলেই বেশ খোলামেলা স্কোয়ার ‘Campo Santi Giovanni е Paolo’ তে এসে পড়া যায়। অপেক্ষাকৃত নির্জন ও বড় এই স্কোয়ার সৌন্দর্যের দিক থেকে কোন অংশেই কম নয় – স্কোয়ারের একপাশে লাল ইটের তৈরি বিশাল গথিক চার্চ ‘Basilica di San Giovanni e Paolo’ রাজত্ব করে – ভেনিসের সবচেয়ে বড় চার্চ হিসাবে বিখ্যাত এই চার্চ ।
আরেক দিকের ইতালির রেনেসাঁ সময়ের তৈরি স্থাপত্য ‘Scuola Grande di San Marco’ ইতালির অন্যতম সুন্দর স্থাপত্য নজর কাড়ে – বিশাল সুন্দর বিল্ডিঙটি সুক্ষ কারুকাজে ও ছবিতে সাজানো – পনেরো শতাব্দীতে আগুনে ভয়ানক ভাবে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরে প্রায় কুড়ি বছর ধরে সম্পূর্ণ নতুন ভাবে তৈরি হয়েছিল, – বর্তমানে এই বিল্ডিঙটি ভেনিসের সিভিল হাসপাতাল।
যাইহোক, এপ্রিলের মাঝামাঝি, অ্যাড্রিয়াটিক সমুদ্র ছুঁয়ে আসা হাওয়ায় এখনো ঠাণ্ডার দাপট, মেঘলা দিনের ধূসর রং, পাশের ক্যানালের জলের ঘন সবুজ রং-এ সন্ধ্যা নামার তোড়জোড় – সবাই যেন যুক্তি করে মিলেমিশে ভেনিসের ঐতিহাসিক চরিত্রটিকে ধরে রাখার চেষ্টা করছে, ভেনিসকে আরও বেশী রহস্যময়, পুরনো করে তোলার চেষ্টা করছে – আর সেটাই তো ভেনিসের নিজস্ব আবেদন, ভেনিসের আকর্ষণ – যে আবেদনে, যে আকর্ষণে পৃথিবীর মানুষ মজেছে।