প্যারিসের পথে পথে – ছয় (The Tuileries Garden, Paris)

শীতে বাগানের গাছ গুলোতে একটাও পাতা নেই, রুক্ষ শীতলতার মধ্যে নিঃস্ব রিক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাগানের মাটি ফুল গাছের অপেক্ষায় বসে। শীতের রুক্ষ ঠাণ্ডা হাওয়া বয়ে যায় এই বিস্তারিত বিশাল বাগানের বুকে, হয়তো বা ফ্রান্সের ইতিহাসের সেই রাজা রানী যারা এই বাগান তৈরি করেছিল, ভোগ করেছিল তাদের দীর্ঘ নিঃশ্বাস বয়ে বেড়ায় এই রুক্ষ বাতাস। তাঁদের তৈরি সাধের বাগানে আজকের মানুষের হাসি আনন্দময় বিচরণ দেখে বোধহয় ওদের প্রেতাত্মা এই ঠাণ্ডা বাতাসের মতোই হু হু করে নিংড়ে ওঠে।

ইতিহাসের পাতার নানা অধ্যায়ের সাক্ষী এই বাগান – Tuileries Garden, ল্যুভ মিউজিয়াম থেকে বেরিয়ে ঠিক সামনেই উদার বিস্তৃত এই বাগান হাতছানি দেয়, তাই সেই দিকেই এগিয়ে যেতে হয়। ফ্রেঞ্চ রানী Marie Antoinette এই বাগান ব্যবহার করতেন, ফরাসী বিপ্লবের সময় এক দল উন্মত্ত রাগি জনতা বাগানে ঢুকে তছনছ করে দেয়, আগুন লাগিয়ে দেয়।

ফরাসী বিপ্লবে ফ্রান্সের রাজাকে সরিয়ে দেওয়ার পর এই বাগান ফ্রান্সের ন্যাশনাল বাগান হয়ে যায়, ও জনসাধারণের জন্যে খুলে দেওয়া হয়। রাজকীয় সংগ্রহের মূর্তি এনে বাগানে প্রদর্শন করা হয়। জন সাধারণের কাছে আসার পরে নানা সময়ে এই বাগানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি হয়ে এসেছে। বাগানের চারিদিকে মধ্য যুগের বিখ্যাত শিল্পীর তৈরি স্ট্যাচু স্থাপন করা হয়। পরে, ধীরে ধীরে নতুন শিল্পীর তৈরি স্ট্যাচুও এই বাগানে স্থান পেয়েছে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে এই বাগান বেশ ক্ষতি গ্রস্ত হয়। যুদ্ধের সময় বাগানের শেষে পশ্চিম দিকের জোড়া প্যাভিলিয়ান Jeu de paume ও the Orangerie গ্যালারিতে রূপান্তরিত হয়। এখানে ক্ল্যদ মনের ওয়াটার লিলি সিরিজের সম্পূর্ণ প্রদর্শনী আছে। আবার দ্বিতীয় যুদ্ধের সময় জার্মানরা Jeu de paume আর্ট গ্যালারিকে গুদাম ঘর হিসাবে ব্যবহার করেছিল। জার্মানরা যে সমস্ত শিল্প সামগ্রী চুরি করতো বা লুট করতো – সমস্ত এই Jeu de paume তেই জমা রাখত। এমনকি জার্মানদের অবহেলায় সেই সময় ক্ল্যদ মনের ওয়াটার লিলি সিরিজের অনেক ছবি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

যাইহোক, the Orangerie গ্যালারির ঠিক সামনেই, Rodin এর তৈরি বিখ্যাত স্ট্যাচু, সেটা পেরিয়ে ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে ধূসর নেড়া সারি বাঁধা গাছের মাঝে রাস্তা ধরে হেঁটে যাই। বিকেল, কিন্তু আকাশে মেঘের ঘন ঘটা দেখে মনে হয় বৃষ্টি নামবে। সামনে বিশাল নাগরদোলার নীচে কফি শপের সামনে প্রচুর টুরিস্ট জমা হয়েছে, এই জমাট ঠাণ্ডায় ও ধূসর আবহাওয়াতেও এখানে এক উৎসবের মেজাজ।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, France, Travel and tagged , , , , , , , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s