সঙ্গীত উৎসব ( Fête de la Musique, Toulouse)

মাঝ রাত পর্যন্ত জ্যাজ, পপ, রক মিউজিকের চড়া সুর ভেসে আসছে। কিছুক্ষণ আগেই একদল আফ্রিকান ড্রাম, গিটার বাজাতে বাজাতে নিচের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। আজ সারারাত এই গানের গুঁতো চলবে। শুনেছি সঙ্গীত উৎসবে তুলুসে এই হয়। সঙ্গীতে, মিউজিকে কান ঝালাপালা হয়ে যায়। নাঃ, কেউই রেকর্ড বাজায় না, নিজেদের বাদ্য যন্ত্র দল বেঁধে বাজিয়েই তুলুসকে সুরে সুরে মাত করে দেয়।

উত্তরায়ণে দিনের দৈর্ঘ্য যেদিন বেশী হয়, সারদিনই সেদিন তুলুস বাসীরা সুরে সুরে মাতোয়ারা হয়, সেদিন সুরের ছন্দে ছন্দে দোলে তুলুসের জীবন। তুলুসের সমস্ত গলি সুরের জালে ঢাকা পড়ে যায় এই দিন। ক্যাপিটল, ঝ জরাস থেকে শুরু করে গারন নদীর তীর পর্যন্ত সমস্ত জায়গা মিউজিসিয়ানদের দখলে চলে যায়। পথের মোড়ে দল বেঁধে দাঁড়িয়ে যে কোন মিউজিক শুনতে বা দেখতে বাঁধা নেই। রাস্তার মোড়ে মোড়ে চলে নানান দলের নানা রকমের বাজনা বাদন। সেদিন পেশাদার মিউজিসিয়ান থেকে শুরু করে নিতান্তই অ্যামেচার মিউজিসিয়ানরাও পথে নেমে সাধারণ মানুষের সামনে মিউজিক বাজায়। সেদিন জায়গায় জায়গায় অনেক ফ্রি কনসার্টও হয়।

ফ্রান্সের এক বিখ্যাত সুরকার Maurice Fleuret এই সঙ্গীত উৎসবের সূচনা করেন। সুরের তালে সমস্ত মানুষকে পথে টেনে আনার জন্যে তাঁর এই প্রয়াস শুরু হয়েছিল ১৯৮১ সালে, আজ এই উৎসব বিশ্ব সঙ্গীত দিবস হিসাবেও পালন করা হয়। ফ্রান্সে প্রতি দুই জনে একজন যে কোন বাদ্য যন্ত্র বাজাতে শেখে, তাই সমস্ত সুর সাধকদের সাধারণ ভাবে পথে এসে সবার সঙ্গে সুরের আদান প্রদান করে আনন্দ বিতরণ করাই এই উৎসবের মূল লক্ষ্য।

তুলুসে এসে প্রথম দিকে একদম শহরের ভেতরেই আমাদের বাসা ছিল, তাই তুলুস শহর কেন্দ্রের সমস্ত উৎসবের উন্মাদনার স্রোতে ভেসে যেতে আমাদের কোন বাধা ছিল না, ছিল না কোন দূরত্বের সংঘাত। আমাদের বাড়ী থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে ক্যাপিটল, তাই যে কোন সময় বেরিয়ে পড়তে কোন অসুবিধা ছিল না। আবার শহরের একদম ভেতরে বাড়ী হওয়ার কারণে যে কোন উৎসবের আঁচ পেতাম, মিউজিক তো মনে হত আমাদের ঘরের ভেতরেই বাজছে।

জানি, গানের এই চড়া আওয়াজে কিছুতেই ঘুম হবে না। তাই বেরিয়ে পড়তেই হল। ক্যাপিতল জমজমাট, খোলা কনসার্ট হচ্ছে। সারা রাত চলবে। বিকেল থেকেই তোড়জোড় চলছিল, দেখে গিয়েছিলাম। রাতে আলোয় আলোয় সেজে নিয়েছে ক্যাপিটল। আশেপাশের বেশ কয়েক দেশের মিউজিক সহ কনসার্ট চলছে। ইতালিয়ান, ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ গানে জনগণ উত্তাল আনন্দে মাতোয়ারা। সুরের বাঁধনে যেন দিন রাতকে বেঁধে ফেলেছে সঙ্গীত দিবস। ক্যাপিটলের সামনে হাজার জনতার ভিড়ে সুরের ছন্দে ছন্দে পা ফেলে ঘুমহীন রাত কেটে যায় সংগীতময় ভাবে।          

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, France, Travel and tagged , , , , , , , , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s