তুলুস্ কে যে কত রকম ভাবে সাজতে দেখেছি এখানে আসার পর থেকে। শীত যখন বিদায় বেলার সুর গায়, দিনের উজ্জ্বলতা বেড়ে ওঠে, মার্চ এপ্রিল থেকেই এই শহর সাজতে শুরু করে দেয় আসন্ন বসন্তের জন্যে।
এই শহরের প্রান কেন্দ্র যদি হয় ক্যাপিটল, বড় রাস্তা Allées Jean Jaurès তাহলে প্রধান ধমনী। শহরের এই বড় রাস্তা Allées Jean Jaurès ঘিরেই তুলুসের যত বড় বড় আকাশচুম্বি নতুন ফ্ল্যাট বাড়ী, আধুনিক হোটেল, ব্যাবসা বানিজ্য, রেল ষ্টেশন। এই বড় রাস্তার ঠিক উপরেই আছে তুলুসের বড় লাইব্রেরী Médiathèque José-Cabanis। এই লাইব্রেরির ছাদ থেকেই বাস্টিল ডে তে বাজি পোড়ানো হয়।
আবার Allées Jean Jaurès এই এপ্রিলের প্রথমে তুলুস কার্নিভ্যালের সাজে সেজে ওঠে। কখনো বা Pont Neuf এও কার্নিভ্যালের আসর বসে। মনে হয়, কার্নিভ্যাল ইউরোপিয়ান জাতীয় জীবনের এক অঙ্গ। এই সময় শুধু তুলুস নয়, ইউরোপের নানা দিক কার্নিভ্যালের আনন্দে, ছন্দে মাতে। কার্নিভ্যাল মানে শুধুই যে অদ্ভুত পোশাকে সেজে দলে দলে হেঁটে যাওয়া তা নয়, প্রতি বছরের কার্নিভ্যালের এক নতুন নতুন বিষয় থাকে। এখানে কার্নিভ্যাল মানে সুর, ছন্দ, মজা, হাসি, আনন্দ।
যখন তুলুসে এসেছিলাম প্রথম দিকে, তুলুসের কার্নিভ্যাল বেশ ঘরোয়া ছিল। অনেক ছোট বাচ্চারাও নিজেদের দল নিয়ে কার্নিভ্যালে যোগ দিত। নানা বয়সের, নানা সাজের লোকেরা, এমনকি আশেপাশের গ্রামের পরিবারও কার্নিভ্যালে অংশ গ্রহণ করতো। মোটকথা, তুলুসের কার্নিভ্যালে প্রথম দিকে খুব বেশী পেশাদারিত্ব ছিল না, ছিল শুধুই ঘরোয়া এক আনন্দ।
যতই দিন যায় তুলুসের কার্নিভ্যালে পেশাদারিত্বের ছোঁয়া লাগে, মানুষ বাড়ে, কার্নিভ্যাল ঘিরে ব্যবসা হয়। নতুন নতুন দল যোগ দেয় এখানে। স্থানীয় মানুষের সঙ্গে সঙ্গে, দূর দূর থেকেও লোকেরা তুলুসের কার্নিভ্যালে যোগ দিতে আসে। ব্রাজিল থেকেও কার্নিভ্যালের জন্যে বিশেষ দল আসে তুলুসে। প্রতি বছরই এক নতুন সংযোজন দেখা যায়। দেখা যায় নতুন কায়দা, কেরামতি।
প্রকৃতি যদি সঙ্গ দেয়, তাহলে তো কার্নিভ্যালের আনন্দে এক নতুন মাত্রা যোগ হয়। এপ্রিলের শুরুতে আবহাওয়া খুবই আরামপ্রদ থাকে, দুপুর দিকে উষ্ণ রোদের উত্তাপ নিতে নিতে কার্নিভ্যালের মিউজিকের ছন্দে ভেসে যেতে বহু মানুষ বেরিয়ে পড়ে রাস্তায়। কার্নিভ্যালের ছন্দে এক অচেনা জন স্রোতে গা ভাসিয়ে দিতে বেরিয়ে পড়ি আমরাও।