কোন এক অচিন শহরে যখন সন্ধ্যা ঘনায়, আকাশ যেন ঝুঁকে পড়ে, অচেনা এক অদ্ভুত অনুভূতি ঘিরে ধরে। কাজের জীবনে তো কখনো প্রান ভরে পৃথিবীর বুকে সন্ধ্যা নামা দেখা যায় না, কিন্তু বার্সিলোনা এসে Plaza de España র বিশাল চত্বরে বসে যখন সন্ধ্যার সন্ধিক্ষণের সাক্ষী হই, এক অদ্ভুত রোমাঞ্চ হয়, ভালো লাগে। কখন যে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামে বুঝি না। চারিদিক আলোয় সেজে ওঠে। শহরের স্বাভাবিক জীবন যেন শ্লথ হয়, কেজো মানুষের ঘরে ফেরার তাড়া জাগে।
আলোয় সাজে বার্সিলোনার আলোকিত আকর্ষণ Font Màgica de Montjuïc। Montjuïc পাহাড়ের নীচে বিশাল Plaza de España চত্বরের মধ্যমণি এই আলোর ফোয়ারা। España মেট্রো থেকে বেড়িয়েই Plaza de España চত্বর।
বার্সিলোনা International Exposition জন্যে ১৯২৯ সালে তৈরি এই ফোয়ারা, সম্ভবত বিশ্বের প্রথম ফোয়ারা যেখানে জলের সঙ্গে আলোর খেলা ও মিউজিক তালে তালে চলে। প্রদর্শনীর এক বছর আগে Carles Buigas যখন এই আলো ফোয়ারার নক্সা তৈরি করেন, বলা হয়েছিল এই কম সময়ে কিছুতেই সম্পূর্ণ হতে পারে না, কিন্তু, দিন রাত কাজ করে ঠিকই সম্পূর্ণ হয় – প্রথম আলো ও জলের প্রদর্শনী হয় International Exposition শুরুর ঠিক আগের দিন। স্প্যানিশ গৃহ যুদ্ধের সময়ে এই ফোয়ারা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বহুদিন অচল অবস্থায় পড়ে ছিল, পরে আবার তৈরি করে চালু করা হয়, এমনকি বার্সিলোনা অলিম্পিকের সময় এই ফোয়ারা নানা বয়সী মানুষের কাছে এক অন্যতম আকর্ষণ ছিল।
বিশাল চত্বরে ইউরোপিয়ান ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিক সহকারে যখন আলো ও জলের যুগল বন্দী চলে, পরিবেশে সত্যি মনে হয় কোন এক যাদু মোহ তৈরি হয়েছে। প্রচুর মানুষ জমায়েত হয়। এখানে গরম কালে দিনের দৈর্ঘ্য বেশী, আকাশ যেন অন্ধকারেও এক আলো ধরে রাখে, সেই ঘন নীল আকাশের প্রেক্ষাপটে নানা রঙের ফোয়ারা ও মিউজিক জায়গাটাকে সরগরম করে রাখে। গরমের দিনে হাওয়ার সঙ্গে ফোয়ারার হালকা জলের ছিটে যেন প্রান জুড়িয়ে দেয়। অনেকক্ষণ ধরে এই ফোয়ারার দৃশ্য দেখতে দেখতে মোহিত হয়ে কোন এক অন্য জগতের বাসিন্দা হয়ে যাই। মনে হয়, জলের মত সামান্য পদার্থ সুযোগ পেয়ে, সুযোগের সদব্যবহার করে আলোর সঙ্গে মিলে আকাশে উঠে অপূর্ব দৃশ্য সৃষ্টি করে। পৃথিবীতে সবই যে সুযোগেরই খেলা।