দক্ষিণ ফ্রান্সের এক ক্ষুদ্র জনপদ – আলবি। সারা গায়ে ঐতিহাসিক নিস্তব্ধতা জড়িয়ে নিয়ে স্বাগত জানায় টার্ন নদী তীরের এই ফরাসী শহরটি। ইউরোপে গরমের সময় দিনের রঙ খুবই উজ্জ্বল, সেই উজ্জ্বলতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নানা রঙের উজ্জ্বল ফুল ফুটিয়ে ইউরোপিয়ানদের জীবন যেন আরও উজ্জ্বলতায় ভরে দেয় এখানের প্রকৃতি। আর সেই রঙিন দামাল দিনের সঙ্গে ছন্দ মেলাতে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে পড়তেই হয়।
মাঝ জুলাইয়ের সকালে যখন আলবি পৌঁছলাম, ঘন নীল আকাশের উত্তপ্ত সূর্য তখন সোনা গলানো আলো ছড়িয়ে সারা আলবিকে এক মায়া নগরীতে পরিণত করেছে। Sainte-Cécile ক্যাথিড্রাল ঘিরে শতাব্দী প্রাচীন এই ঐতিহাসিক শহরটি খুব সম্প্রতি World Heritage Sites তালিকায় যুক্ত হয়েছে। শতাব্দী ধরে ইতিহাসের নানা সময় এই শহরের বুকে যে ইতিহাস লিখেছিল তা নাকি যুগ যুগ ধরে অপরিবর্তিত ছিল, আর সেই অপরিবর্তিত সময় ও তাঁর চিহ্নকে ঘিরেই আজকের আলবি। Sainte-Cécile ক্যাথিড্রালের সামনে পৌঁছে এর বিশালতার সামনে নিজেদের খুবই নগণ্য বলে মনে হয়।
শোনা যায়, এই শহরে ব্রোঞ্জ যুগের মানুষের বসবাস ছিল। রোমানরাও নাকি ছড়িয়ে ছিল এই অংশে, একসময় তো ইউরোপের অধিকাংশই জায়গাতেই রোমের আধিপত্য ছিল, তবে প্রত্নতাত্মিক খনন করে রোমান সাম্রাজ্যের কোনও ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায় নি। যাইহোক, ইতিহাসের নানা সময়ের নানান ছাপ বহন করে আজকের আলবি ফ্রান্সের এক অন্যতম টুরিস্ট আকর্ষণ।
লাল ইটের তৈরি পুরোন শহর, চার্চ, মনুমেন্ট, নদী, ঐতিহাসিক সেতুর ওপারে নতুন শহরের হাতছানি – সব দেখতে, অনুভব করতে, পাথুরে রাস্তা ধরে চলতে চলতে সময় বয়ে চলে। শহরের প্রতিটি কোণা, প্রতিটি রাস্তা এত যত্ন নিয়ে সাজানো যে দেখে মনে হয় কি ভাবে পারে এরা এতো নিখুঁত ভাবে সাজিয়ে রাখতে, প্রতিটি ঐতিহাসিক জিনিসের যত্ন নিতে?
দুপুর রোদে টার্ন নদী তীরের প্রচুর গাছের নিবিড় ছায়ায় বসে প্রাচীন এই আলবি শহরে নবীন সময়ের বহমান নদীর প্রানের স্পন্দন শুনতে শুনতে সুদূর অতীতের ঐতিহাসিক স্থবিরতা স্বীকার করে নিয়ে অনাগত ভবিষ্যতের দিকে পা ফেলি, চোখ রাখি দিগন্তে, দেখি ঐ পারে নতুনের হাতছানি। হোক তাঁর গৌরবময় অতীত তবু প্রতি মুহূর্তে জীবন, জাতি, কাল, দেশ সবাই যে নতুনের খোঁজ করে চলে। নতুনের খোঁজে না চললে কালের রথ যে থেমে যাবে।