তুষার জমে থাকা পাহাড় শ্রেণীর কোলে ছোট্ট সুইস শহরে যখন সকাল থেকেই ঝকঝকে উজ্জ্বল সূর্যালোক ছড়িয়ে পড়ে, প্রতিদিনের জীবন যাপন শুরু হয় – সেই অদ্ভুত সৌন্দর্যময় দৈব মাহেন্দ্রক্ষণের যে কোনদিন সাক্ষী হতে পারবো ভাবিনি কখনো।
সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আমরা Rhine নদীর ডানদিকে অবস্থিত সুইস শহর – চূর পৌঁছে গেলাম, চূর শহর ভ্রমণ যদিও আমাদের সুইজারল্যান্ড ভ্রমণ তালিকায় ছিল না কিন্তু, এখানে এসে মনে হল – না এলে এক শান্ত নির্জন সুইস সৌন্দর্য দেখা থেকে বঞ্চিত হতাম। এই সময়ে শহরের মানুষ যদিও জাগে নি কিন্তু ঘন নীল আকাশের নীচে সাদা তুষারাবৃত পাহাড় শ্রেণীকে দৃশ্যপট বানিয়ে এই শহরটি নিজে নিজেই যে সেজে উঠেছে মোহময়ী অপরূপা রূপে।
সুইজারল্যান্ডের সবচেয়ে পুরনো শহর হিসাবে খ্যাত এই চূর শহর। সুইজারল্যান্ডের এই ছোট্ট শহরের ইতিহাস এতোই পুরনো যে, এখানে ইতিহাসের ব্রোঞ্জ ও লৌহ যুগের মানুষের বসবাসের নিদর্শন পাওয়া গেছে বলে জানা যায়। প্রাগৈতিহাসিক সময়ের নিদর্শন বুকে নিয়ে আজকের এই চূর শহর সুইজারল্যান্ডের এক অন্যতম আকর্ষণ, বহমান আধুনিক সময় ও স্থবির ঐতিহাসিকতা সহাবস্থান করে এই শহরে।
ধীরে ধীরে যখন এই শহরের মানুষ জেগে উঠছে ছোট্ট এই শহরের পুরনো অংশ আবিষ্কারের জন্যে হাঁটা শুরু করলাম। চুরের পুরনো ঐতিহাসিক অংশে ঘুরতে হলে হাঁটা ছাড়া উপায় নেই, শহরের নতুন অংশে গাড়ি চলে, কিন্তু পুরনো অংশ সম্পূর্ণ car-free। ছোট্ট চার্চ – Church of St. Martin, প্রচুর কফি শপ, দামী সুইস ঘড়ির শো রুম, সুন্দর বাড়ী – জানালায় সুন্দর ফুলের টব ইত্যাদি দিয়ে সাজানো পুরনো শহরের চলার পথের দুই ধার।
পথ চলতে চলতে দেখি কি ভাবে এক সুইস শহর জেগে ওঠে, অতি পরিচ্ছন্ন এই শহর কি ভাবে আরও পরিচ্ছন্ন হয়, কি ভাবে রেস্টুরেন্ট গুলো সারাদিনের প্রস্তুতি নেয়। সকালের টাটকা সুইস পাউরুটির সুবাস ঐতিহাসিক গলি পথকে সুবাসিত করে, মুহূর্তে বর্তমানের প্রয়োজনের কথা মনে পড়ে যায়, এক কাপ কফি আর সুইস ব্রেড দিয়ে পথের ধারের রেস্টুরেন্টে প্রাতরাশ সারা হয়ে যায়। কিছু সময় এই শহরের ছন্দে পা মিলিয়ে আবার আমাদের অন্য দিকে যেতে হবে। বড় কম সময়ের প্রতিশ্রুতি নিয়ে যে এসেছি এখানে।