মুখ না মুখোশ? – – এক (Story)

লোকটার একটা গুণ ছিল – গুণ না দোষ, সে নিজেও ঠিক জানে না, কিন্তু ব্যাপারটা আবিষ্কার করার পরে সে খুব খুশিই হয়েছিল, ভেবেছিল তার জীবনের সমস্ত দুঃখ, দুশ্চিন্তা, অসুবিধার অবসান হতে চলেছে।

আসলে, সেদিন যখন হোটেলের লবিতে ছেলেবেলার বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়েছিল, রীতিমত অবাক হয়ে দেখে, যে ওষুধের কোম্পানির জন্যে সে দিন রাত গাধার মত খেটে চলেছে, সেই কোম্পানির মালিক আসলে তারই ছেলেবেলার বন্ধু।

পেছনের বেঞ্চের মুখচোরা ছেলেটির বড়লোক দশা দেখে লোকটা হিংসেয় প্রায় অজ্ঞানই হয়ে যাচ্ছিল। কোম্পানির মালিকের নাম তো সে অনেক দিন ধরেই জানতো, কিন্তু, সেই নাম যে তারই বন্ধুর হবে তা লোকটা স্বপ্নের ঘোরেও ভাবতে পারে নি।

যাইহোক, মুখে প্রচুর মিষ্টি কথা আর কান এঁটো হাসি ধরে রেখে ছেলেবেলার বন্ধুর সঙ্গে মিনিট দু’য়েকের কুশল বিনিময় সেরে বাথরুমে একটু হালকা হতে গেল। তার কাছে সেই বাথরুম যাওয়া যেন ছিল – নিজেকে আড়াল করা, নিজের হিংসের ঝাঁপি খুলে ধরা, নিজের ভাগ্যকে সাপ সাপান্ত করা, দোষ দেওয়া। বরাবর ভালো ছেলে, ভালো কর্মী, ভালো বাবা, ভালো স্বামী, গুড বয় বলে নাম কিনে জীবনে কি লাভ হল?

একটা বাড়ী কিনতে জীবন শেষ – এর ওর কাছ থেকে, ব্যাংক থেকে ধার নিয়ে, দেনায় চুলের ডগা পর্যন্ত ডুবে আছে। প্রতি মাসের শেষে দেনা শোধ দিতে নিজের রক্ত না বিক্রি করতে হয় – নিজের ভাগ্যকে সাপ সাপান্ত করতে করতে গভীর ভাবে বন্ধুটির কথা ভাবতে ভাবতে বেসিনে হাত ধুতে গিয়েই ব্যাপারটা লক্ষ্য করে চমকে ওঠে।

বেসিনের সামনের আয়নায় বন্ধুটির মুখ – ওর মুখটা বদলে বন্ধুটির মুখ হয়ে গেছে। কি ভাবে হতে পারে? পিছন ফিরে দেখে কেউ নেই, আয়নার সামনে শুধু ঐ লোকটিই আছে। মনের ভুল ভেবে বাথরুম থেকে বেড়িয়ে এলো।

কিন্তু, আশ্চর্য হয়ে দেখল হোটেলের রিসেপশনের লোকটিও ওকে অন্য লোক বলে মনে করছে। বাড়ীতে গিয়ে দেখে ওখানেও ওকে কেউই চিনতে পারছে না, আদরের মেয়েও ওকে চিনল না – আশ্চর্য?

তাহলে, কি সত্যিই ও বদলে গেছে, এমনকি অফিসে গিয়েও দেখে সবাই ওকে সম্মান করে বসের অফিসে নিয়ে গিয়ে ছেলেবেলার বন্ধু বলেই পরিচয় দিচ্ছে। এমনকি, ওর হাতে এক সুটকেস ভর্তি টাকা ধরিয়ে দিতেও বস দ্বিধা করলো না।

কি চলছে সব? নিজেকে নিয়ে ভাবার জন্যে ও শহর থেকে দূরে গিয়ে এক হোটেলে গিয়ে উঠল, ব্যাপারটাকে একটু তলিয়ে ভাবতে হবে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শুরু হল লোকটির ভাবা। একে একে অফিসের প্রতিটি কলিগের কথা মন দিয়ে ভাবল – আশ্চর্য হয়ে দেখল, আয়নায় একে একে মুখ গুলো বদলে যাচ্ছে, যখনই ও যার কথা ভাবছে আয়নায় তার নিজের মুখের বদলে ভাবনার সেই মানুষটার মুখ ভেসে উঠছে।

ও বুঝে গেল, ও মুখ বদলাতে পারে, যে কোন রূপ ধারণ করতে পারে। আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল লোকটি। বাঃ, দারুণ ব্যাপার তো, পুরনো আমিকে যখনই আর ভালো লাগবে না, পুরনো আমিকে অন্য কোন মুখে বদলে দেওয়া যেতে পারে। মুখ বদলের এই বিশেষ গুণ বা দোষ আবিষ্কার করে ও এতোই আনন্দিত ছিল যে সেই মুখ গুলোর পেছনের সুখ দুঃখ, বিপদ আপদ জড়ানো আসল জীবনের কোন খোঁজই তার ছিল না। সে মত্ত ছিল তার নতুন নতুন মুখ নিয়ে।

এদিকে অফিসে শুরু হয়ে গেছে তুলকালাম কাণ্ড, সেই লোকটি যে মালিকের রূপ ধরে অফিসে এসেছিল, যার হাতে বস সুটকেস ভর্তি টাকা তুলে দিয়েছে – আসলে টাকা গুলো তো ছিল সমস্ত কালো টাকা। ঐ টাকার খোঁজে তো পুলিশের কাছেও যাওয়া যায় না, তাই বস শহরের নামকরা গুন্ডাদের ঐ মুখোশধারী লোকটিকে খোঁজার ভার দিল।

গুন্ডাদের নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে পড়ল শহরের নানা দিকে, শহর ছাড়িয়ে মফঃস্বল, গ্রাম সব দিকেই শুরু হয়ে গেল ঐ সুটকেস ভর্তি টাকা ও লোকটির খোঁজ।

চলবে

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Uncategorized and tagged , , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান