নীল নদীর উপত্যকার প্রাগৈতিহাসিক মিশর ও তার সভ্যতাকে ঘিরে সমস্ত পৃথিবীর মানুষের তীব্র কৌতূহলের সীমানা নেই। যুগ যুগ ধরে মিশরের সেই রহস্যকে আবিষ্কারের নেশায় মগ্ন হয়েছে জুলিয়াস সিজার, নেপোলিয়ান এর মতো বিশাল ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে পৃথিবীর কতো মানুষ। আবার মিশরের রহস্য আবিষ্কারের নেশায় রহস্যময় ভাবে কতো মানুষের আকস্মিক মৃত্যুও হয়েছে।
মিশরকে ঘিরে যেন সর্বদাই এক কুয়াশাছন্ন, অজাগতিক, শিরশিরে, শিহরণ যুক্ত এক রহস্যের আভাস পাওয়া যায় – আর সেই রহস্যময় প্রাচীন মিশর যখন প্যারিসের ল্যুভরের এক অংশে উঠে আসে জীবন্ত হয়ে, ল্যুভরে টুরিস্টের সামনে খুলে দেয় মিশর রহস্যের এক ঝলক – সবাই তো তখন নেশাগ্রস্তের মতোই সেই দিকে পা বাড়ায়।
হাজার হাজার বছরের পুরনো মিশর সভ্যতার হাতছানি যে কিছুতেই এড়ানো যায় না – মিশরের মমি, ফারাও-দের পাথুরে মূর্তি, হায়ারোগ্লিফিক্স লিপি আঁকা ফলক, মিশরীয় স্পিংক্স এর মূর্তি, পাথুরে কফিন – সারকোফেগাস, যার গায়ে গায়ে প্রাচীন মিশরীয় ইতিহাস আঁকা, প্রাচীন মিশরের দেব দেবীর ছবি – সবই যে এক অসীম রহস্যে পূর্ণ। ল্যুভরের এই অংশ এক আশ্চর্য, অদ্ভুত অদৃশ্য শক্তি দিয়ে টুরিস্টদের যেন টেনে ধরে ।
ল্যুভরে মিউজিয়ামে এসে তাই কেউই মিশরের এই ঝলক না দেখে ফেরে না। বিশাল ল্যুভরের নানান হলে হারিয়ে যেতে যেতে টুরিস্টরা ল্যুভরের ভেতরের ম্যাপ দেখে দেখে ঠিকই মিশরের রহস্যময় হলে এসে উপস্থিত হয়।
ল্যুভরের এই মিশর অংশে ঢোকার মুখেই স্বাগত জানায় রহস্যময় হায়ারোগ্লিফিক্স লিপি আঁকা এক পাথুরে ফলক, আর এক সারকোফেগাস। বিশাল হলের ভেতরে ঢুকে সত্যিই মনে হয় হাজার বছরের মিশরের সভ্যতার রহস্যময় জালে বাঁধা পড়ে গেছি – ভেতরে কেমন যেন এক শীতল শিরশিরে অনুভূতি।
ল্যুভরের এই অংশে মিশর সভ্যতার প্রায় পঞ্চাশ হাজার ছোট বড় অ্যান্টিক পিস আছে। মিশরের প্রাচীন অ্যান্টিক কি ভাবে ল্যুভরে মিউজিয়ামে জায়গা পেল সেও এক রহস্য, হয়তো নেপোলিয়ানের লুটতরাজের এক দীর্ঘ ইতিহাসই এই বিশাল সংগ্রহের জন্যে দায়ী। ল্যুভরের ইতিহাসের নানান সময়ে মিশরের নানান অ্যান্টিক স্থান পেয়েছে ল্যুভরের এই মিশর অংশে।
ল্যুভরে মিউজিয়ামের শিল্প সংগ্রহের ইতিহাস যাই হোক না কেন, টুরিস্টরা কিন্তু এখানে মিশরের রহস্যে ডুবে যায়, হাজার বছর পুরনো মিশরের সূর্য দেবতার ছবি দর্শকদের যেমন রোমাঞ্চিত করে, তেমনি প্রাচীন মিশরীয় লিপিকারের মূর্তি – যার বাম হাতে ধরা প্যাপিরাস কাগজ, ডান হাত কলম ধরার ভঙ্গিমা, আর পাথুরে চোখে তীব্র উজ্জ্বলতা – তা যেন খুবই আশ্চর্য করে। এই লিপিকারের মূর্তি প্রমান করে দেয় হাজার বছর আগে মিশরে শিক্ষা ও লিপির খুবই গুরুত্ব ছিল – হাজার বছর আগেই মিশরে ইতিহাস লিপিবদ্ধ করার প্রচলন ছিল।
বহু প্রাচীন অথচ এক উন্নত সভ্যতার নিদর্শন গুলো দেখতে দেখতে কখন যে সময় ফুরিয়ে যায়! প্যারিসের এই ল্যুভরে মিউজিয়াম যেন শিল্প জগতের এক অসীম রহস্যের আবরণে ঢাকা। ল্যুভরে মিউজিয়ামের রহস্যকে সঠিক ভাবে আবিষ্কার করতে হলে জীবনের এক মাস সময়ও যে খুব কমই। অনন্ত সময়ের মানব সভ্যতার ইতিহাস, তার রহস্য, তার সৃষ্টিকে কি এক জীবনের মাপা সময়ের মধ্যে জেনে নেওয়া এতোই সহজ? তাই, জীবনের ঐটুকু সময়ের মধ্যে ‘যা দেখেছি, যা পেয়েছি, তুলনা তার নাই’।
দারুন লাগলো। নিজেই যেন মিশর ঘুরে এলাম। 🙂
অ্যাডমিনকে নিরন্তর শুভেচ্ছা
আপনার কমেন্টের জন্যে ধন্যবাদ। ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো। আপনাকেও অশেষ শুভেচ্ছা।